পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কনেদেখা NAS রোজ নীলামের ডাকের সময় সেখানে উপস্থিত থাকতো । তার গাছটার দিকে চেয়েও দেখে না-লোকে চেয়ার, টেবিল, সোফা, আলমারী কিনচে, ভাঙা পরোনো ক্লিক ঘড়ি পৰ্যন্ত বিক্ৰী হয়ে গেল, কিন্তু গাছের শখ খাব বেশি। লোকের নেই, গাছটা। আর বিক্ৰী হয় না। একদিন নীলামওয়ালা বল্লে-বাব গাছটার তো সবিধে হচ্চে না, তুমি ফেরত নিয়ে যাবে ? কিন্তু ফেরত নিয়ে গিয়ে তার রাখবার জায়গা নেই, থাকলে এখানে সে বিক্রীর জন্যে দিয়েই বা যাবে কেন । সে সময় তার অত্যন্ত খারাপ সময় যাচে, চাকরির চেষ্টায় আকাশ-পাতাল হাতড়েও কোথাও কিছু মিলচে না-নিজের থাকবার জায়গা নেই তো পিপে-কাটা কাঠের টবে বসানো অত বড় গাছ রাখে। কোথায় ? মাসখানেক পরে হিমাংশাের অবস্থা এমন হলো যে আর কলকাতায় থাকাই চলে না । কলকাতার বাইরে যাবার আগে গাছটার একটা কিনারা হয়ে গেলে ও মনে শান্তি পেত। কিন্তু আজও যা, কালও তাই-নীলামওয়ালাকে কমিশনের রেট আরও বাড়িয়ে দিতে হয়েচে গাছটা রাখবার জন্যে, নৈলে সে দোকানে রাখতে চায় না। কিন্তু হিমাংশর দভাবনা এই যে, ও কলকাতা ছেড়ে চলে গেলে গাছটার যত্ন হবে না, নীলামওয়ালার দায় পড়েছে, কোথাকার একটা এরিকা পাম গাছ বাঁচল কি ম’লো -অত তদারক করবার তার গরজ নেই । কিন্তু শেষে বাধ্য হয়ে কলকাতা ছাড়তে হলো হিমাংশকে । অনেকদিন পরে সে আবার এল। কলকাতায় । নীলামওয়ালার দোকানে বিকেলে গেল। গাছ দেখতে । গাছটা নেই, বিক্ৰী হয়ে গিয়েচে সাড়ে সাত টাকায় । কমিশন বাদ দিয়ে হিমাংশর বিশেষ কিছ রইল না। কিন্তু টাকার জন্যে। ওর তাত দঃখ নেই, এতদিন পরে সত্যি সত্যি গাছটা পরের হয়ে গেল । তার প্রবল আগ্রহ হলো গাছটা একবার সে দেখে আসে। নীলামওয়ালা সাহেব প্রথমে ঠিকানা দিতে রাজী নয়, নানা আপত্তি তুললে-বহ, কণ্টে তাকে বঝিয়ে ঠিকানা যোগাড় করলে 1 সাকুলার রোডের এক সাহেবের বাড়ীতে গাছটা বিক্ৰী হয়েচে, হিমাংশ পরদিন সকালে সেখানে গেল । স্যাকুলার রোডের ধারেই বাড়ী, ছোট গেটওয়ালা কম্পাউন্ড, উঠোনের একধারে একটা বাতাবী নেব। গাছ, গেটের কাছে একটা পাকুড় গাছ । সাহেবের গাছপালার শখ আছে —পাম অনেক রকম রেখেচে, তার মধ্যে ওর পামটাই সকলের বড় । হিমাংশ বলে, সে হাজারটা টবের হাজারটা পামের মধ্যে নিজেরটা চিনে নিতে পারে । কৰ্ম্মপাউন্ডে ঢ়োকবার দরকার হলো না, রাস্তার ফুটপাথ থেকেই বেশ দেখা যায়, বারান্দায় ওঠার পৈঠার ধারেই তার পিপে-কাটা টবাসদ্ধে পামগাছটা বসানো রয়েচে । গাছের চেহারা ভালো-তবে তার কাছে থাকবার সময় আরও বেশি। সতেজ, সবজি ছিল । হিমাংশার মনে পড়ল। এই গাছটার কবে কোন ডাল গজালো-তার খাতায় নোট করা থাকতো। ও বলতে পারে প্রত্যেকটি ডালের জন্মকাহিনী-একদিন তাই ওর মনে ভারি কলটি হলো, যেদিন দেখলে সাহেবের মালী নীচের দিকের