পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Αυ Ο বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প সম্ভব যে--- সরদাস বললেন-সে বিষয়ে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। এর সত্যতা তুমি নিজের চোখে দেখো । তোমার অমত না থাকলে আমি সামনের পণিমায় সব ব্যবস্থা ক’রে রাখি । সরদাসের কথার পর থেকেই প্ৰদ্যমান অত্যন্ত বিস্ময়ে ও কৌতুহলে কেমন এক রকম হয়ে গিয়েছিল । সে ঘাড় নেড়ে বললে-আচ্ছা রাখবেন, আমি অসব । সরদাস বললেন-বেশ, বড় আনন্দিত হলাম। তুমি মাঝে মাঝে একবার করে এখানে এস, তোমাকেও তৈরী হতে হলে দ-একটা কাজ করতে হবে, সে বলে দেব । প্ৰদৰ্শন আর-একবার সম্পমতিসচক ঘাড় নড়িবার পর সরদাসের কাছে বিদায় চাইলে । তারপর সে চিন্তিতভাবে বিহারের পথ ধরলে । তার মনে হচ্ছিল-দেবী সরস্বতী স্বয়ং ! শেবতপদ্মের মত নাকি রংটি তাঁর, না জানি কত সন্দর তাঁর মািখশ্ৰী ! আচাৰ্য্য বসব্রত বলেন বটে, • • • • ভদ্রাবতী নদীর ধারে শাল-পিয়াল-তমাল বনে সে-বার ঘনঘোর বিষা নামল। সারা আকাশ জড়ে কোন বিরাহিণী পরসন্দরীর অযত্নবিন্যস্ত মেঘবরণ চুলের রাশ এলিয়ে দেওয়া, প্রাবট-রজনীর ঘনান্ধকার তার প্রিয়হীন প্রাণের নিবিড় নিজ জনতা, দীর বনের ঝোড়ো হাওয়ায় তার আকুল দীঘশবাস, তারই প্রতীক্ষাশ্রান্ত আখি দটির অশ্রাভারে ঝরঝর অবিশ্রান্ত বারিবষণ, মেঘমোদর আকাশের বকে বিদ্যুৎচমক তার হতাশ প্রাণে ক্ষণিক আশার মেঘদত ! আষাঢ়ী পণিমার রাতে প্ৰদ্যুম্ন সরদাসের সঙ্গে নদীর মাঠে গেল। তারা যখন সেখানে পৌছল, তখন মেঘ নেমে সমস্ত আকাশ ছেয়ে ফেলেছে, চারিদিক তরল অন্ধকারে অস্পশািট দেখাচ্ছে । প্রদর্শন সরদাসের কথামত নদী থেকে স্নান ক’রে এসে বস্ত্র পরিবত্তন করলে। সঙ্গীর ক্লিয়াকলাপে প্ৰদ্যুম্ন বঝতে পারলে তিনি একজন তান্ত্ৰিক । তাদের বিহারে একজন ভিক্ষ ছিলেন, তিনি যোগাচায্য পদ্মসম্ভবের শিষ্য। সেই ভিক্ষর কাছে তান্ত্রিক ক্লিয়াকলাপের কথা কিছু কিছ, সে শনেছিল ! সরদাস অনেকগলো রক্তজবার মালা সঙ্গে ক’রে এনেছিলেন, তার মধ্যে কতকগলো। তিনি নিজে পরলেন, কতকগলো প্ৰদৰ্শনকে পরতে বললেন। ছোট মড়ার মাথার খলিতে তেল-সলতে দিয়ে প্রদীপ জবললেন। তাঁর পজোর আয়োজনে সাহায্য করতে করতে প্ৰদৰ্শন হাঁপিয়ে পড়ল। ব্যাপারটা শেষ পয্যন্ত কি দাঁড়ায় দেখবার জন্যে তার মনে এত কৌতুহল হচ্ছিল যে, অন্ধকার রাতে একজন প্রায়-অপরিচিত তান্ত্রিকের সঙ্গে একা থাকবার ভয়ের দিকটা তার একেবারেই চোখে পড়ল না । অনেক রাত্রে হোম শেষ হলো ।