পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাস্তিক অধ্যয়ন শেষ ক'রে লোকনাথ যখন ৩ার আচাখে jর কাছে বিদায় চাইলেন, আচাৰ্য্য তাঁকে বলেছিলেন-একটা কথা সব সময় মনে মেখে তুমি, অনেক লোকের ওপরে ‘লোকনাথ’ নামটি সার্থক ক’রে জীবনের পথে অগ্রসর হবে। অলোকসামান্য প্রতিভাবান এবং প্রিয়৩ম ছাত্রকে বিদায় দিয়ে, ৩৮ খৃ; দীন-তিন দিন পৰ্যন্ত মৌনী ছিলেন । মঠ থে<ে/৮ বার হয়ে লোকনাথ কোনো বড় রাজসভায় গেলেন না। অধ্যাপনা করবার কোনো আগ্রহ দেখালেন না, বিবাহ ক’লে সংসারী হবার বিষয়েও সম্পণে উদাসীন রয়ে গেলেন। কিছদিন লক্ষ্যহীন অবস্থায় এদিক ওদিক ঘৰবার পর শেষে পণ্যভদ্রাব নিজ জন ৩ীরভৗমতে কুটীর বেধে সেখানেই বাস। করতে শার, করলেন । এতে বেশির ভাগ লোকই তাকে বললে পাগল । বাল্যকাল থেকেই লোকনাথ একটি অন্য প্রকৃতির । সেদিন প্রভাতের আলো খব ফািটত, বালক লোকনাথ ৩ার গ্রামের ধারের মাঠে একা একা বেড়িযে বেড়াত, সমবয়সী অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সে মিশত না। সন্ধ্যার ধােসাধ আকাশের তলে গ্রামের অন্দরে হোট পাহাড়টা যখন বড় আকাশের গা থে.ে খসে পড়া বড় প্রকাণ্ড মেঘস্তুপের মত দেখাত, লোকনাথ দড়ের পর দন্ড ধ'রে মাঠের ধারের বনের কাছে বসে বসে একমনে কি ভাবত, তার অপালক শিশনয়ন দটি দন্ডের পর দশড ধ'রে ও-পাহাড়ের দিকে আবদ্ধ থাকত। তার বিশ্ববাস ছিল, ওই পাহাড়টাই পথিবীর প্রান্তসীমার পাহাড় । ‘আচ্ছা, যদি ও ছাড়িয়ে চলে যাই, দপুরে দরে,-ক্লােমই দরে,-আরও দারে,-খব খাব দরে -খব খাব খাব খর্ব দিবে।--তা হলে কোথায় গিয়ে পৌছব?” দশ্যমান। সীমা চিহ্ন ছাড়িয়ে অজ্ঞাত রাজ্যে এতদর যাবার কল্পনায় বালকের মন বিসিমত অভিভত হয়ে পড়ত, নিজের ঘর, নিজের ভাইবোনের কথা সে ভুলে যেত, শািন্ধ অস্পষ্ট সন্ধ্যার আলোকে পরিবত্তনশীল মেঘরাজ্যের পেছনে, অনেক অনেক পেছনে সে কোন দেশ যেখানে এই এমনি ধসের, মৌন চারিদিক, সে দেশের কথা মনে হতেই তার মন অবশ হয়ে আসত। তার দিদিমা যে রামায়ণ মহাভারতের গলপ করেন, সে সব ঘটনা সেই দেশেই ঘটে, রাম-রাবণের যন্ধ সেখানে এখনও চলছে, সে দেশের সীমাহীন গহন বনের মধ্যে গলাকাটা কবন্ধ রাক্ষস এখনও অন্ধকারে হােতড়ে বেড়াচ্ছে, যত অসম্ভব আর আজগবেী জিনিসের দেশ যেন সেটা । কিন্তু সে-সব অনেকদিনকার কথা। বড় হয়ে উঠে লোকনাথ অত্যন্ত রক্ষদশন ও কঠোর প্রকৃতির লোক হয়ে উঠলেন । তাঁর নীরস শাক পাণ্ডিত্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলবার জন্যেই যেন তার আকৃতি দিন দিন লালিত্যহীন হয়ে উঠতে লাগল। যখন তাঁর প্রকাশড মাথাটার অসংযত দীঘ চুলের গোছা। আর দীঘী রক্ষে দাড়ি বাতাসে উড়ত তখন সত্যই তাঁকে অত্যন্ত ভয়ানক বলে মনে হতো। তীক্ষা ইস্পাতের মতন এক অস্বাচ্ছন্দ্যকর দীপ্ত নীল আভা তাঁর চোখে