পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SR বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প খেলতে দেখা যেত, কিন্তু এক এক সময় আবার সে দীপ্তি শান্ত হয়ে আসত, তাঁকে খাব সৌম্য, খাব সদিশন, খাব উদার ব’লে মনে হতো। বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে লোকনাথের বালোর সে সদর-পিয়াসী মন ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করতে লাগল। ত্ৰিশ বৎসর বয়স পণ্য হবার পর্বেই দশ্যমান জগৎটা একটা প্রশেনর রােপ নিয়ে তাঁর চোখের সামনে উপস্থিত হলো । জগতের সন্টিকত্তা কেউ আছে কি না। এই আজগবেী প্রশন মিয়ে লোকনাথ মহা দশ্চিন্তাগ্রস্ত ও ব্যতিব্যস্ত অবস্থায় কালান্তিপাত করতে লাগলেন । তাঁর জীবনের লক্ষ্যও ছিল আজগবী ধরনের । সাংসারিক সখী-সবিধা লাভের প্রচেস্টাকে তিনি পৰবৰ্ণ হতেই অবজ্ঞার চোখে দেখতেন, যশোলাভ বিষয়েও তিনি হয়ে উঠলেন সম্পণে উদাসীন । একবার মঠের আচায্যের কাছে মগধ থেকে পত্র এল —মঠের অতীশদের মধ্যে আচাৰ্য্য যাঁকে উপযন্ত মনে করবেন, তাঁকে হস্তীর পণ্ঠে করে সসম্মানে রাজধানীতে নিয়ে আসা হবে। রাজসভার সারিপদতিলক মহাচায্য জীবনসারির সম্প্রতি দেহান্তর ঘটেছে। আচায্য একমাত্র লোকনাথকেই এ পদের উপযক্ত বলে ভেবেছিলেন, কিন্তু লোকনাথ কিছতেই মগধ যেতে রাজী না হওয়ায় তাঁর এক সতীৰ্থ মগধে প্রেরিত হলেন । এর কিছকাল পরেই লোকনাথ মঠ পরিত্যাগ করলেন এবং এক বৎসরের মধ্যেই পণ্যভদ্রার নিজজন তীরভমি আশ্রয় করলেন । সেই থেকে আজ ত্রিশ বৎসর তিনি এ নিজজন মাঠের মধ্যে এ কুটীরখানিতে একা বাস করছেন । জৈন ধৰ্ম্মমমন্ডলীর পক্ষ থেকে প্রতি বৎসর নিদিলিট পরিমাণ তপডল ও দ’খানা বহিব্বাস তাঁকে দেওয়া হতো। মাঠের ধারের বনো কাপাসের তুলা থেকে তিনি অন্য পরিধেয় নিজের হাতে প্রস্তুত ক’রে নিতেন। প্রথম প্রথম দ-একজন ছাত্রকে নিয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর পাশিডত্য, খ্যাতি ও উন্নতচরিত্রের আকর্ষণে শিক্ষাথীর ভিড় বাড়বার উপক্ৰম হলো, অধ্যাপনা তিনি তখন একেবারেই বন্ধ করে দিলেন। পণ্যভদ্রার দাই তীরের নিতজন মােঠ তখন স্থানে স্থানে বনে ভরা ছিল । অনেক স্থানে এইসব বনে উপর-পাহাড়ের শাল ও দেবদার গাছের বীজের চারা, কোনো কোনো স্থানে নানা রকমের কাঁটাগাছ ও বনজ লতার ঝোপ । দক্ষিণের পাহাড় একটা অপরিসর উপত্যকায় দ্বিধা-বিভক্ত, পণ্যভদ্রার একটা ক্ষীণ স্রোতঃশাখা। এর মাঝখান দিয়ে পাহাড়ের ওপারে বেরিয়ে গিয়েছে, তার গৈরিক জল-ধারার উপর সব সময়ই দাই তীরের পত্ৰশ্যাম শিশী দেবদার শ্রেণীর কালো 豆任町目 এখানেই ছিল লোকনাথের কুটীর । লোকনাথের ছোট কুটীরখানি হস্তলিখিত পথির একটা ভান্ডার-বিশেষ ছিল। কাঠের ত্ৰিপট্ট শক্ত করে বেত দিয়ে বেধে লোকনাথ একরকম পািন্তকাধার প্রস্তুত করেছিলেন এবং বহৎ বহৎ তালপত্র ও ভতিজপত্রের পথিকে স্থান দেবার জন্যে তিনি ত্রিপটের মাঝখানে অনেকখানি ক’রে ফাঁক রেখেছিলেন।