পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প তারপর একখানা বেহাগ । বাংলা গান এবার । সকলে শহয়ে পড়লোশান্তির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। অনেকে দেখলে বৌয়েরও চোখ দিয়ে জল পড়ছে গান গাইতে গাইতে-রািপসী গায়িকা, একেবারে যেন বাহ্যজ্ঞান ভুলে গিয়েছে গানে তন্ময় হয়ে । সেদিন থেকেই সকলে শ্ৰীপতির বেীকে অন্য চোখে দেখতে লাগলো । ওর সম্পবন্ধে ক্ৰমে উচ্চধারণা করতে সকলে বাধ্য হলো আরও নানা ঘটনায়। পাড়াগাঁয়ে সকলেই বেশ হাশিয়ার, একথা আগেই বলেছি। ধার দিয়ে-সে যদি এক খচি চাল কি দি পলা তেলও হয়--তার জন্যে দশবার তাগাদা করতে এদের বাধে না । কিন্তু দেখা গেল শ্ৰীপতির বোঁ সম্পণে দিলদারিয়া মেজাজের মেয়ে। দেবার বেলায় সে কখনো না বলে কাউকে ফেরায় না, যদি জিনিসটা তার কাছে থাকে। একেবারে সে মক্তহস্ত সে বিষয়ে । কিন্তু আদায় করতে জানে না, তাগাদা করতে জানে না, ম্যুখে তার রাগ নেই, হাসিম খ ছাড়া তার কেউ কখনো দেখে নি । শ্ৰীপতির বৌয়ের আপনি-পরি জ্ঞান নেই, এটাও সবাই দেখলে। পাশের বাড়ীতে চক্কত্তি গিনী বিধবা, একাদশীর দিন দাপরে তিনি নিজের ঘরে মাদর পেতে শয়ে আছেন, শ্ৰীপতির বৌ একবাটি তেল নিয়ে এসে তাঁর গায়ে মালিশ করতে বসে গেল । যেন ও তাঁর নিজের ছেলের বোঁ । চকত্তি গিন্নী একটা অবাক হলেন প্রথমটা । পাড়াগায়ে এরকম কেউ করে না, নিজের ছেলের বৌয়েই করে না তো অপরের বোঁ । -এসো, এসো মা আমার, এসো ! থাক, তেল মালিশ আবার কেন মা ? তোমায় ওসব করতে হবে না, পাগলী মেয়ে এই পাগলী মেয়েটি কিন্তু শািনলে না। সে জোর করেই বসে গেল। তেল মালিশ করতে । মাথার চুল এসে অগোছালো ভাবে উড়ে পড়ছে মাখে, অতিরিক্ত গরমে ও শ্রমে কিছ কিছ ঘাম দেখা দিয়েছে-চক্কত্তি গিন্নী এই সন্দর মেয়েটির মািখ থেকে চোখ যেন অন্যদিকে ফেরাতে পারলেন না । বড় স্নেহ হলো এই আপন-পর-জ্ঞান-হারা মেয়েটার ওপর । ইতিমধ্যে কমলার বিয়ে হয়ে গেল। শবশরিবাড়ী যাবার সময়ে সে শ্ৰীপতির বৌয়ের গলা জড়িয়ে ধরে কোঁদে বল্লে-বৌদিদি, তোমায় কি করে ছেড়ে থাকবো ভাই ? মাকে ছেড়ে যেতে যত কম্পট না হচ্ছে, তত হচ্ছে তোমায় ছেড়ে যেতে ! এই এক ব্যাপার থেকেই বোঝা যাবে শ্ৰীপতির বৌ এই অলপ কয়েক মাসের মধ্যে গ্রামের তরণ মনের ওপর কি রকম প্রভাব বিস্তার করেছিল। পজোর সময় এসে পড়েছে। আশিবনের প্রথম, শরতের নীল আকাশে অনেকদিন পরে সোনালি রোদের মেলা, বনসিমের ফল ফটেছে ঝোপে ঝোপে, নদীর চরে কােশ ফলের শোভা। পাশের গ্রাম সত্ৰাজিৎপরে বাঁড়িয্যে বাড়ী পজো হয় প্রতি বছর, এবারও শোনা যাচ্ছে মহানবমীর দিন তাদের বাড়ী আর বছরের মত যাত্রা হবে কাঁচড়াপাড়ার দলের । শ্ৰীপতির বেী গান-পাগলা মেয়ে, এ কথাটা এতদিনে এ গাঁয়ের সবাই