পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফল లిన সমস্ত দিন পরামর্শ চলিল । সন্ধ্যার সময় ঠিক হইল কাল সকালেই গাড়ী ডাকিয়া আপদ বিদায় করা হইবে, আর একদিনও এখানে না, কি জানি কখন কি বিপদ ঘটাইবে । বিশেষত পাড়ার মধ্যে ও রকম দাঙ্গজাল বউ থাকিলে পাড়ার অন্য অন্য বউঝিও দেখাদেখি ঐরকমই হইয়া উঠিবে। সেদিন রাত্রে সশীলাকে অন্য এক ঘরে শইতে দেওয়া হইল-ইহা মোক্ষদা ঠাকরণের বন্দোবস্ত-কাল সকালেই যখন যেখানকারী আপদ সেখানে বিদায় করিয়া দেওয়া হইবে, তখন আর তাহার সঙ্গে সম্পক কিসের ৯ রাত্রে শইয়া শইয়া কত রাত পয্যন্ত তাহার ঘািম আসিল না। ঘরের জানালা সব খোলা, বাহিরের জ্যোৎসনা ঘরে আসিয়া পড়িয়াছিল। তাহার মনে কাল ও আজ এই দইদিন অত্যন্ত কন্ট হইয়াছে- সে সর্বভাবত নিবেধি, লাঞ্ছনা ভোগের অপমান সে ইহার পর্বে কখনও তেমন করিয়া অন্যভব করে নাই, যদিও মারধোর ইহার পন্ধেব বহবার হইয়াছে। তাহার একটা কারণ এই যে আজ ও কালকার দিনের মত শবশার-শাশড়ী ও এক-উঠান লোকের সামনে এ-ভাবে অপমানিতাও সে কোনদিন হয় নাই। তাই আজ সমস্ত দিন ধরিয়া তাহার চোখের জল বাঁধ মানিতেছে না • কাল মারা খাইয়া পিঠ কাটিয়া গিয়াছে ও হাত দিয়া ঠেকাইতে গিয়া হাতের কাঁচের চুড়ি ভাঙ্গিয়া হাতও ক্ষতবিক্ষত হইয়াছে। তাহার সেই সবামী, যে সবামী পাঁচ-ছয় বৎসর পকেব এমন সব রাতে তাহাকে সমস্ত রাত ঘামাইতে দিত না, সে পান খাইতে চাহিত না বলিয়া কত ভুলাইয়া পান মখে গজিয়ে দিত-সেই স্বামী এরপ করিল ? পান খাওয়ানোর কথাটিই সশীলার বার-বার মনে আসতে লাগিল । রাতে জ্যোৎসনা ব্রুমে আরও ফাটিল । তখন চৈত্রমাসের মাঝামাঝি, দিনে তখন নতুন-কাচি-পাতা-ওঠা গাছের মাথার উপর উদাস অলস বসন্ত-মধ্যাহ্ন ধোঁয়া ধোঁয়া রৌদ্রের উত্তরীয় উড়াইয়া বেড়ায়" --দীঘ দীঘ দিনগলি প্রসফটপ্ৰসদ-সরভির মধ্য দিয়া চলিয়া নদীর ধারের শিমলতলায় সন্ধ্যার ছায়ার কোলে গিয়া ঢলিয়া পড়ে পাড়াগাঁয়ের আমবনে বাঁশবনে জ্যোৎসানাঝরা বাতাসে সারারাত কত কি পাখীর আনন্দ-কাকলী - বসন্ত-লক্ষীর প্রথম প্রহরের আরতির শেষে বনের গাছপালা তখন আবার নাতন করিয়া টাটকা ফলের ডালি সাজাইতেছে। -- শাইয়া শইয়া সাশীলা ভাবিল, জগতে কেউ তাহাকে ভালবাসে না-কেবল ভালবাসে তাহার মৌরীফল । মৌরীফল পত্র লিখিয়াছে, তাহার কথা মনে করিয়া সে রোজ রাত্রে কাঁদে, তাহাকে না দেখিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া তাহার কমন্ট হইতেছে। সত্যই যদি কেউ তাহাকে ভালবাসে তো সে ওই মৌরীফল -আর ভালবাসে। ওই ছোট-বউটা । আহা, ছোট বউ-এর বড় কািট ! ভগবান দিন দিলে সে ছোট-বউ-এর দঃখ ঘচাইবে । •••কিন্তু স্বামী যে তাহকে বিদায় করিয়া দিতেছে ? ও কিছ না, অভাবে পড়িয়া উহার মাথা খারাপ হইয়া