পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প যে আনন্দের ইঙ্গিত আছে, বিভতিভীষণ সাহিত্য রচনার জন্য সেগালিকেই আশ্রয় করিয়াছেন, জীবনাড়ম্বর তাঁহার সাহিত্যের উপজীব্য নয় । এদিক দিয়া তাঁহার গ্রন্হগলিকে গাহস্থ্যি উপন্যাস বলা যায়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আবিভাবের পাবে যে-সমস্ত গাহস্থ্যি উপন্যাস বাংলাদেশে লিখিত হইয়াছে বিভীতিবাবর রচনা ঠিক সে পৰ্যায়ভুক্ত নহে। কারণ এমন একটি নতন উপাদান তাঁহার রচনায় আছে, জলে যে-ভাবে ছায়া মিশ্রিত হইয়া থাকে সেইভাবে আছে, যাহা রবীন্দ্রপবোঁ যাগের গাহস্থ্যি উপন্যাসে ছিল না। সেটি প্রকৃতি । এটি রবীন্দ্রপবোঁ যাগে অভাবিত ছিল। এটি জীবনের একটি নতন সত্ৰ, আমাদের দেশে তো বটেই, পাশ্চাত্ত্য দেশেও । প্রকৃতিকে জীবনের উপাদান রূপে গ্রহণ ও স্বীকার নাতন যাগের লক্ষণ, সে নাতন যােগ এখনও পরাতন হয় নাই। পশ্চিমের হােত হইতে রবীন্দ্রনাথ ইহা গ্রহণ করিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথের হাত হইতে রবীন্দ্রোত্তিরগণ গ্রহণ করিয়াছেন, রবীন্দ্রোত্তির কথাশিলপীগণের মধ্যে বিভতিভীষণ সব চেয়ে অধিক পরিমাণে গ্রহণ করিয়াছেন । এখানেই বিভতিবাবর রচনায় নিতেনত্ব, দেশ ও কালের চিহ্ন । এই উপাদানটি সব চেয়ে বেশি আধনিক, শ্রমিক-ধিনিক-সংঘাত বা সবজনীন অসন্তোষের চেয়েও অনেক বেশি আধনিক । প্রাচীন সাহিত্যের সঙ্গে নািতন সাহিত্যের এইখানেই প্রভেদ । এই প্রভেদের সচেনা কবে কিরূপভাবে হইল ? এখানে পাশ্চাত্ত্য সাহিত্যের নজির গ্রহণ ছাড়া উপায় নাই । মনে রাখিতে হইবে যে, Lyrical Ballads S. Industrial Revolution Sistoiloửặo l obot \siề নয়, একই মনোভাবের ও জীবনধারার এপিঠ-ওপিঠ । আরও একটি নজির সমরণ করা যাইতে পারে। রুসো ও ভলেন্টয়ারকে ফরাসী বিপ্লবের পােবসরী বলা হয়। কিন্তু দজনের জীবনধম সম্পপণ্য বিপরীত। ভলেন্টয়ার যন্ত্রযাগের পরোক্ষ গর, আর রসো প্রকৃতির প্রতি অন্ধ আকর্ষণের প্রত্যক্ষ ঋষি। একজন লিরিকাল ব্যালাডসের পশ্চাতে দন্ডায়মান, অপরজন দন্ডায়মান ইনডাস্ট্রিয়াল রিভলিউশনের পশ্চাতে । আজ পর্যন্ত সভ্যদেশের জীবনযাত্রা এই দাই ধারার দ্বারা প্রভাবিত, নিয়ন্ত্রিত ও আন্দোলিত । একটির উপধারা শ্রমিক-ধিনিক সংঘাত, অপরটির উপধারা প্রকৃতিকে জীবনের উপাদানরপে গ্রহণ। এই ধারা ও উপধারা কালক্ৰমে আমাদের জীবনে, কাজেই আমাদের সাহিত্যেও, আসিয়া পৌছিয়াছে। মাঝখানে আছেন রবীন্দ্রনাথ, তিনি প্রধানত একতরকে গ্রহণ করিয়া তাহাতে বৈচিত্র্য, গভীরতা ও আধ্যাত্মিক আলোক আরোপ করিয়াছেন । তাঁহার পরবতীগণ কেহ একটিকে, কেহ অপটিকে গ্ৰহণ করিয়াছেন । তাই যাঁহাদের রচনায় শ্রমিক-ধিনিক-সংঘাতের বা সবজনীন অসন্তোষের বিকাশকে লক্ষ্য করিয়া সবকাল ও সবসমাজের লক্ষণ পাইলাম মনে করি, তাঁহাদের আধনিক মনে করি, এ যেমন সত্য, তেমনি যাঁহাদের রচনায় প্রকৃতিকে মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হইতে দেখি তাঁহারাং তেমনি আধনিক হইবেন, ইহাও তেমনি সত্য। বস্তুত কোনো লেখক ইচ্ছ করলেও অনাধিনিক হইতে পারেন না, বড়জোর আধনিকতাকে প্রচ্ছন্ন রাখিতে