পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-সে কথা আমি জানি ? পুরুষমানুষ-সে তুমি বোঝে। আর জ্ঞাতিশত্ৰু বের সঙ্গে বিবাদ করে এখানে টিকে থাকতে পারবেও না তুমি। সেই হলো ওদের দেশত্যাগের সূত্রপাত। তারপর আশ্বিন মাসে পুজোর পরই ওরা প্ৰথমে এল এই ভাতছালা । এখানে প্ৰথম প্ৰথম ভালই চলেছিল, পরে একটু অসুবিধে হয়ে গেল। তার প্রধান কাবণ, ভাতছালায় এরা এসেছিল স্থানীয, গোয়ালার ধানের জমি করে দেবে আশা দিয়েছিল বলে। কিন্তু দুবছর হয়ে গেল, ধানের জমির কোনো বন্দোবস্তই আর হয়ে উঠলো না । এক বেলা খাওযা হয়। ওদের তো অন্য বেলা হয় না । সেই সময় এই কালী গোয়ালিনী যথেষ্ট সাহায্য করেছিল ওদের । বিবক্ত হয়ে ওরা এখান থেকে উঠে যায় বাসুদেবপুরে। সেখানে অন্য সুবিধে মন্দ ছিল না, কিন্তু ম্যালেবিয়াতে অনঙ্গ-বেী মরে যাওয়ার যোগাড় হলো । তখন নতুন গায়েব কােপালীদের সঙ্গে বাসুদেবপুরের হাটেই আলাপ হয় গঙ্গাচরণেব, কাপালীয়া পাঠশালার মাস্টার চাইচে শুনে গঙ্গাচৰণ যেতে বাজী হয়। ওরাও খুব আগ্রহ কবে নিয়ে যেতে চায়। সেই থেকেই নতুন গায়ে বাস। অনঙ্গ বলে-কালী, ঘুমুলে নাকি ? বাবাঃ কি ঘুম তোদের ? মতি ঘুম-জডিত স্বপে বলে- বামুন-দিদি, ঘুমোওনি এখনো ? রাত যে পুইয়ে এস্ ! ঘুমিয়ে পড়ুন । পুবে ফর্সা হলো --তোর মুণ্ডু হলো পোডারমুখী -- অনঙ্গ-বেী ভাবছিল তার জীবনে কত জায়গায় যাওয়া হলো, কত কি দেখা হলো ! তার বয়সী ক'টা মেয়ে এমন নানা জায়গায় বেডিযেচে ? ওই তো তারই সমবয়সী হৈম রয়েচে হবিহরপুরে, তার শ্বশুরবার্ডার গ্রামে। কোথাও যায়নি, কোন দেশ দেখেনি । সে ভাবিলে-ভালো কাপড় পরতে পারি নে, খেতে পাই নি তাই কি ? আমার মত এত জায়গা বেডিয়েচে হৈ’ম?” কত জায়গা। ধর হরিহরপুর, সেখান থেকে ভাতছালা, ভাতছালা থেকে বাসুদেবপুর-- তার পর এখন নতুন গাঁ'। উঃকথাটা কালীকে বলবার জন্যে সে ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ডাক দিলে--ও কালী, কালী, একটা কথা শোনা না ? মতি ঘুম-জডিত স্বরে বললে-বামুন-দিদি, তুমি জ্বালালে দেখচি, ঘুমুতি দেব না। রাত্তিরে ? কালী ঘুমিয়ে গিয়েচে অনেকক্ষণ, ওকে আর ডাকাডাকি কোরো না । রাত পুইয়ে গেল যে । RV)