পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

--তা সকাল বেলা। উঠলি একপালি করে চালের খরচ। খেতে দু’বেলার আট-ন’টি প্ৰাণী । কি করে চালাই বলে তো ভায়া ? ও আধমণ চালে আমার ক”দিন ? গঙ্গাচরণ মনে মনে বললে-তার ওপর খাওয়ার যা বহর । অমন যদি সকলের হয় বাড়ীতে, তবে রতিকান্ত ঘোষের বাবাও চাল যুগিয়ে পারবে নাদুৰ্গা পণ্ডিত কিছুতেই ঘুমুতে যায় না। মাঝে পড়ে গঙ্গাচরণেরও ঘুম হয় ন। • অতিথিকে ফেলে রেখে সে একা শুতে যায় কি করে ? তার নিজেরও যে ভয় একেবারে না হয়েচে তা নয় । দুৰ্গা পণ্ডিত বললে-একটা বিহিত পরামর্শ দাও তো ভায়া। ওখানে একা একা থাকি, যত সব অজ মুখুদের মধ্যিখানে। আমরা কি পারি? আমরা চাই একটু সৎসঙ্গ, বিদ্যে পেটে আছে এমন লোকের সঙ্গ। নয়তো প্ৰাণ যে হাঁপিয়ে ওঠে। না কি বল ? -ঠিক ঠিক । --তাই ভাবলাম যদি পরামর্শ করতে হয় তবে ভায়ার ওখানে যাই । বাজে লোকের সঙ্গে পরামর্শ করে কি হবে ? তুমি যা বুদ্ধি দিতে পারবে, চাষাভুষো লোকের কাছ থেকে সে পরামর্শ পাবো না । যুদ্ধের খবর কি ? -জাপানীরা সিঙ্গাপুর নিয়ে নিয়েচে । -শুধু সিঙ্গাপুর কেন ? ব্ৰহ্মদেশ ও নিয়ে নিয়েচে। জানো না সে খবর ? --না-ইয়ে-শুনি নি তো ? ব্ৰহ্মদেশ ? সে তো-যেখান থেকে রেঙ্গুন চাল আসে রে ভায়া। ওই যে সস্তা মোটা মোটা আলো চাল । সিদ্ধও আছে, তবে আমি আতপ চালটাই খাই । এ আবার এক নতুন খবর বটে। কাল বিশ্বাস মশায়ের চণ্ডীমণ্ডপে বসে গল্প করবার একটা জিনিস পাওয়া গেল বটে । উঃ, এ খবরটা সে এত দিন জানে না ? কেউ তো বলেও নি । জানেই বা কে এ অজ চাষা-গায়ে ? তবে গঙ্গাচরণের কাছে সবটাই ধোঁয়া ধোয়া। রেঙ্গুন বা ব্ৰহ্মদেশ যে ঠিক কোন দিকে তা সে জানে না । পুব বা দক্ষিণ দিকে কোন জায়গায় ? অনেক দূর। পর দিন দুপুর বেলাতেও দুৰ্গা পণ্ডিত এখানেই আহার করলে। অনঙ্গ-বেী তার জন্য দু’তিন রকমের তরকারি রান্না করলে । খেতে ভালোবাসে, ব্ৰাহ্মণ অতিথি । তাদের চেয়ে অনেক গরীব । 8 R