পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাস মশায় অনেকক্ষণ থেকে সেই একই কথা বলচেন-ধান নেই, তাব দেবো কি। আমার গোলা খুঁজে দ্যাখে । অধর কাপোলী বললে-আমাদের পাড়াটা আপনি কার্জ দিয়ে বেঁচিয়ে রাখুন। আসচে বারে আপনার ধার এক দানাও বাকি রাখবো না । বিশ্বাস মশায়ের বঁা-দিকে গঙ্গাচরণ অনেকক্ষণ থেকে বসে আছে। সে এসেছিল। ধানচাল সম্বন্ধে একটা ব্যবস্থা করা যায় কি না বিশ্বাস মশায়ের সাহায্যে, সেই চেষ্টায়। এত বড় মিটিং-এর মধ্যে এসে পড়বে তা সে ভাবে নি । সে চুপ করে বসেই আছে। হঠাৎ তার দিকে ফিরেই বিশ্বাস মশায় বললেন-পণ্ডিত মশাই, আপনি এই নিন। গোলার চাবি। এদের গিয়ে খুলে দেখান ওতে কি আছে— বিশ্বাস মশায় চাবিটা গঙ্গাচরণের সামনে ছুড়ে ফেলে দিতেই ক্ষেত্র কােপালী বলে উঠলো- গোলা দেখতে হবে না । আমরা জানি ও গোলাতে আপনার ধান নেই । চটে উঠে বিশ্বাস মশায় বললেন - তবে কোথায় আছে ? --আপনি ধান লুকিয়ে রেখেছেন বাড়ীতে । --তুমি দেখেচ ? --দেখতে হবে না, আমরা জানি । কথা শেষ করে ক্ষেত্র কােপালী মিটিং ছেড়ে উঠে চলে গেল । অধর কােপালী অনুনয়ের সুরে বললে-শুনুন বিশ্বেস মশায়, আপনি পাড়ার মা-বাপ। এ বিপদে যদি আপনি না বাচান, তবে ছেলেপিলে নিই কোথায় দাড়াই বলুন দিকি ? অমন করবেন না। ধানের ব্যবস্থা আজ করে দিতেই হবে আপনাকে । বিশ্বাস মশায় দাত খিচিয়ে বললেন-অমনি বলে সবাই। তুমি তো আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়ে দিব্যি নিশ্চিন্দি হলো-তারপর ঠ্যাল সামলায় কে শুনি ? ধান আমার নেই । -একটু দয়া করুন-একটু আমাদের দিকে চান। আজ দু'দিন বাড়ীতে একটা চালের দান কারো পেটে যাই নি, সত্যি বলচি । --বেশ, তুমি আধ কাঠা চাল আমার ঘর থেকে নিয়ে যাও না, তাতে কি ? না হয়। আমি এক মুঠো কম খাবো। সে কথা তো বললিই হয়, কি বলেন ঠাকুর মশাই ? ዓ 8