পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সৌদামিনী। কিন্তু ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলে উঠলো-না, আজই নিয়ে যাবেন’খন। ধামা আমি দেবো । বিশ্বাস মশায় বললেন- এখন না । সন্দের পরে। কেউ টের না পায়। গঙ্গাচরণ এ অঞ্চলে কবিরাজিও করে । কিন্তু কবিরাজি এখানে ভালো চলে না— কারণ এখানকার সবার “সারকুমারী মত’। সে এক অদ্ভুত চিকিৎসার প্রণালী । জর যত বেশিই হোক, তাতে স্নানাহারের কোনো বাধা নেই। দু’চার জন সেরেও ওঠে, বেশির ভাগই মরে। তবু ও মতের লোক কখনো ডাক্তার বা কবিরাজ দেখাবে না, মরে গেলেও না । গঙ্গাচরণ কথাটা জানে, তাই বললে-আপনার সেই সারকুমারী মতের ফকির আসবে নাকি ? নাঃ । সেবার জলজ্যান্তি নাতিটাকে মেরে ফেললে । আমি ও- মতে আর নেই। - ঠিক তো ? দেখুন, তবে আমি চিকিচ্ছে করি মন দিয়ে। সৌদামিনী বলে উঠলো-আপনি দেখুন ভালো করে। আমি ও-মতে আর কাউকে যেতে দেবো না। এ বাড়ীতে। চাল নিয়ে যাবেন সন্দের পরে। দিন দুই পরে বিশ্বাস মশায় একটু সুস্থ হয়ে উঠলেন। একদিন গঙ্গাচরণ গিয়ে দেখল বিশ্বাস মশায় বিছানায় উঠে বসে তামাক খাচ্চেন। গঙ্গাচরণ উনলে, এ গ্রাম থেকে বিশ্বাস মশায় উঠে যাচেন । জিনিসপত্র বঁাধছাদা হচে । বাইরে আট-দশখানা গরুর গাড়ীর চাকার দাগ। রাত্রে এই গাড়ীগুলি যাতায়াত করেচে বলেই মনে হয়। গঙ্গাচরণ বুঝতে পারলে বিশ্বাস মশায় মজুদ ধান চাল সব সরিয়ে দিয়েছেন রাতারাতি । গঙ্গাচরণ বললে - কোথায় যাবেন চলে গা ছেড়ে ? বিশ্বাস মশায় বললেন-আপাতোক যাচ্চি গঙ্গানন্দপুর, আমার শ্বশুরবাড়ী। এ গায়ে আর থাকবে না। এ ডাকাতের দেশ। সামান্য দু’চার মণ ধান চাল কে না ঘরে রাখে বলুন তো পণ্ডিত মশায়। তার জন্যে মানুষ খুন ? আজ ফসকে গিয়েচে, কাল যে খুন করবে না। তার ঠিক কি ? না, এ দেশের খুরে নমস্কার বাবা । —আপনার জমিজমা পুকুর এ সবের কি ব্যবস্থা হবে ? আমার ভাগ্নে দুর্গাপদ মাঝে মাঝে আসবে যাবে। সে দেখাশুনো করবে।