পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনঙ্গ-বেী স্বামীকে খালি হাতে ফিরতে দেখে চালের কথা কিছু জিজ্ঞেসই করলে না। গঙ্গাচরণ হাত-পা ধুয়ে বসলে, চা করেও নিয়ে এল। দীনু নিজেও নাকি আজ চালের চেষ্টায় বেরিয়েছিল। কোথাও সন্ধান মেলে নি। অনঙ্গ-বেী ওকে বললে-খাবে এখন ? গঙ্গাচরণ কৌতুহলের সঙ্গে খাবার জায়গায় গিয়ে দেখলে থালের একপাশে শুধু তরকারি, ভাত নেই-খানিকটা বেশি করে মিষ্টি কুমড়ো সেদ্ধ, একটু আখের গুড়। স্ত্রী যেন অন্নপূর্ণা, এও তো কোথা থেকে জোটাতে হয়েচে ওরাই । গঙ্গাচরণ কিছু ঠিক করতে পারে না ভেবে ভেবে। রোজ রোজ এই খেয়ে মানুষ কি বঁচে । স্ত্রীকে বললে--আর এক খাবার দেখে এলুম। বামুনডাঙা-শেরপুরে। সেখানে সবাই কলাই সেদ্ধ খাচ্চে - খাবে একদিন ? অনঙ্গ-বৌয়ের দিকে চেয়ে ওর মনে হলো এই ক’দিনে ও রোগ হয়ে পডেচে। বোধ হয় পেট পুরে খেতে পায় না নিজে আর ওই বুড়োটা এসে এই সময় স্কন্ধে চেপে আছে। বুড়োকে খাওয়াতে গিয়ে ওর নিজের পেটে কিছু যাচে না হয়তো । নাঃ, এমন বিপদেও পড়া গিয়েচে । অনঙ্গ-বৌ কি বলতে যাচ্ছিল এমন সময় বাইরে থেকে কে বলে উঠলো-ও বামুন-দিদি অনঙ্গ-বেী বাইরে এসে দেখলে ভাতছালার মতি মুচিনী উঠোনে দাড়িয়ে । শরীর জীৰ্ণশীর্ণ, পরনে উলি-দুলি ছেড়া কাপড়, মাথায় রুক্ষ চুল বাতাসে উড়চে। ওকে দেখে মতি হাসতে গেল। কিন্তু শীর্ণ মুখের সব দাঁতগুলো বেরিয়ে হাসির মাধুৰ্য গেল নষ্ট হয়ে । সর্বপ্রথমে অনঙ্গ-বেী প্রশ্ন করলে-কে, মতি! খাস নি কিছু ? আয়-বোস। তার পর দু’মিনিটের মধ্যে দেখা গেল টেমি জেলে উঠোনে একখানা কলার পাত পেতে মতিকে বসিয়ে দিয়ে অনঙ্গ-বেী ওকে খেতে দিয়েচে, সেই মিঠে কুমড়ো সেদ্ধ আর লাউশাক চচ্চড়ি। মতি বললে--দু’টো ভাত নেই বামুন-দিদি ? অনঙ্গ-বেী দুঃখিত হলো । মতি মুচিনীর মুখে নিরাশার চিহ্ন। ভাত দিতে পারলে না। ওর পাতে অনঙ্গ-বেী একদানা চাল নেই ঘরে আজ ক'দিন। এই সব খেয়ে চলচে সবারই। তার যে মেলে না। লাউশাক আর কুমড়ো কত কষ্টে যোগাড় করা। অনঙ্গ-বেী আদর করে বললে--আর কি নিবি মতি ? bዖ6»