পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ゲ8 বিভূতি-রচনাবলী —কবি-সম্মেলন হয় কোন সময় ? ক্ষেমদাস জিজ্ঞেস করলেন—তুমি বুঝি নতুন এসেচ পৃথিবী থেকে ? তোমার কথাতে মনে হচ্ছে । এখানে সময়ের কি মাপ ? কালোহয়ং নিরবধিঃ—অনস্তকাল বায়ুর মত শন শন বইচে । বিদগ্ধমাধবে শ্ৰীক্লপগোস্বামী বলেচেন তাই—অনর্পিতচরাং চিরাৎ-রূপগোস্বামীও কবি, তিনিও আসেন। আর তুমি জানো না, যার সঙ্গে এসেচ এই আচার্য রঘুনাথ দাসও কবি ? এ’র রচিত চৈতন্যস্তবকল্পবৃক্ষ কি পড়ে থাকবে ? পড়েচ বলে মনে হচ্চে না । শোনো তবে— কচিন্মিশ্রাবাসে ব্ৰজপতিস্তস্তোরুবিরহাৎ শ্লথাৎ শ্ৰীসন্ধিত্বাদধতি দৈর্ঘ্যং ভুজপদোঃ । কেমন ছন্ ? কেমন লাগচে ওঁর শ্লোক ? যতীন বিষগ্নমুখে বল্লে—আজ্ঞে বেশ ! বৃন্দাবনের গোবিন্দ-মন্দিরের আরতি বহুক্ষণ থেমে গিয়েচে । পাশের রাজপথ দিয়ে দু’একখানা গাড়ী যাতায়াত করচে, মন্দিরের বড় বড় দরজায় আলো জলচে, কোথা থেকে উগ্র বকুল ফুলের গন্ধ ভেসে আসচে বাতাসে, মন্দিরের সামনে একটা হিন্দুস্থানী টাঙ্গাওয়ালা যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কি বকবকি করচে । যতীন ভাবলে, স্বৰ্গ-মর্তের কি অদ্ভুত সম্বন্ধ ! অথচ বেঁচে থাকতে পৃথিবীর লোকে কেউ এ রহস্য জানে না । মৃত্যুভয়ে ভীত হয়, এত ৰভু জীবনের খবর যদি কেউ রাখতো, প্রেম-ভক্তির এ সম্পর্ক যদি রাখতে জানতে ভগবানের সঙ্গে –তবে কি তুচ্ছ বিষয়-আশয়, টাকা-কড়ি, জমিদারী নিয়ে ব্যস্ত থাকে? এইমাত্র যে লোকটা সামনের রাস্তা দিয়ে মোটর চড়ে গেল ও হয়তো একজন মাড়ায়ারী মহাজন, সারাজীবন ব্যাঙ্কে টাকা মজুত করে এসেচে-জীবনের অন্য কোনো অর্থ ওর জানা নেই, কেবল তেজীমন্দী, লাভ-লোকসান এই বুঝেচে । জয়পুর শহরে হয়তে ওর সাততল অট্টালিকা। কিন্তু হয়তো ছেলেগুলো অবাধ্য, বেশ্বাসক্ত, স্ত্রী কুচরিত্রা । মনে মুখ নেই- অথচ ও কি জানে, এই পাশেই মদনমোহনের মন্দিরে এই গভীর রাত্রে ভিন্ন ভিন্ন লোকের কবি সাধুরা আজ সমবেত হয়েচেন, সেখানে পুষ্পের মত নারীর স্নেহ, কত শতাব্দীর পার থেকে ভেসে আসা অমর মহাপুরুষদের বাণী, বকুলপুষ্পের সুবাস, ভগবানে অপিত মধুর প্রেমভক্তির পরিবেশ—এইখানেই স্বৰ্গ-মর্ত্যের বিশাল ব্যবধান রচনা করেচে। হায় অন্ধ পৃথিবীর মানুষ! 36 পৃথিবীর হিসেবে দীর্ঘ ছু বছর কেটে গেল। _ সেদিন পুষ্প ও যতীন বসে কথা বলচে বুড়োশিবতলার ঘাটে, এমন সময় পুষ্প হঠাৎ চীৎকার করে বল্পে—এই ! থামো—থামো-খবরদার— পরক্ষণেই সে ব্যাকুল, উদ্বিগ্ন মুখে বহুদূর আকাশের দিকে একদৃষ্টি চেয়ে বল্লে—যতীনদী, शडौनक्ष