পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Σ- বিভূতি-রচনাবলী 寝 যতীন বিরক্তির সুরে বল্লে--সব তাতেই তোমার ঠাট্টা । আমার ব্যথা আমিই জানি । —বেশ ভালই । যাও, গিয়ে দেখে শুনে এসো, মায়ের বাছা— আহ ! —তুমিও চলে। পথে নানা বিপদ, চুম্বকের ঢেউ—ঢেউ কখন কি রকম হবে, ওসব আমি বুঝতে পারিনে। শেষকালে আবার কোথায় গিয়ে ঠেলে উঠবে জন্ম নিয়ে, বিশ্বাস কিছু নেই। তার চেয়ে চলো সঙ্গে । কোলা-বলরামপুর গ্রামে বা বা করচে শতরের দ্বিপ্রহর । নিবিড় বাশবনে ঘুঘু ডাকচে উদাস-মধ্যাহ্নবেলায়, বলে বনে তিৎপল্লার হলুদ ফুল ফুটেছে। যতীন অনেকদিন পরে বাংলার শরতের এ স্থপরিচিত দুগুগুলি দেখলে । বাশঝাড়ে সোনার সড়কির মত নতুন বঁাশের চারা ঠেলে উঠেছে, বনশিমতলায় বেগুনী ফুল ফুটে ঝোপের মাথা আলো করচে–বর্ষার শেষে জল সরে যাচ্চে ডোবায়, পুকুরে নদীতে -তারের টাটকা কাদায় সাদা বক গেড়ি গুগলি খুজে বেড়াচ্চে, জলের ধারেই কাশফুলের ঝাড় থেকে হাওয়ায় কাশফুলের সাদা তুলোর মত পাপড়ি উড়চে । যতীন বল্লে—কি চমৎকার, পুপ! বাংলার সব পাড়াগায়েই এমন । মন খারাপ হয়ে গেল। এর সঙ্গে জীবনের কত স্মৃতি জড়ানো ! ছেলেবেলায় এমুনি শরতে পূজোর ছুটিতে স্কুল-বোডিং থেকে বাড়ী আসতুম.ষ্ঠাখো দ্যাখে৷ এই গেরস্তর বাড়ীটিতে কি শিউলি ফুলটা তলায় পড়ে রয়েচে ! আহা ! পুষ্প বল্পে – দুপুরের রোদে এখনও শুকোয় নি—ঘন ছায়৷ কিনা ! যতীন স্বপ্নালস চোখে বল্লে—কতকাল পরে যেন নিজের মাটির ঘরটিতে ফিরে এলুম পুষ্প । এমনি স্নিগ্ধ, এমনি আপন । চলো— ঘরের মধ্যে বিছানা পাতা—তাতে যতীনের সেই তরুণী মা আধময়লা লেপর্কাথা গায়ে শুয়ে ম্যালেরিয়ায় ভুগচে । শুধু এখানে নয়, পাশের বাড়ীতেও তাই—জানলার কাছে ছোট তক্তপোশে আর একটি বৌ শুয়ে জরে এপাশ-ওপাশ করচে, তার পাশে দুটি ছোট ছোট ছেলে —জরে ধুকচে তারাও রান্নাঘরে একটি বৃদ্ধ কলাই-এর ডালে সম্বর দিয়েচেন, তারই স্বগন্ধ জরাক্রান্ত বাড়ীর বাতাসে । পাশের বাড়ীর বৌটি চিচি করে বলচে—একটু জল দিয়ে যাও পিসিমা । বৃদ্ধ বলচে—এক মানুষ কতদিকে যাবে,•কটা হাত পা ? কাল গিয়েচে একাদশী, আর এই খাটুনি। একটু সৰুর করে। গোরু দুটো সেই কোন সকালে বেঁধে দিয়ে এসেচি নদীর ধারের বাচড়ায়, একটু জল দেখিয়ে আসবার সময় পাইনি এওঁ বেলা হোল । যতীন এসে ওর নতুন মায়ের বিছানার পাশে দাড়ালো। একটু আগে ওর মা ওর কথা মনে করে কেঁদেচে জরের ঘোরে। এই তো গত বর্ষায় ও মায়ের কোল ছেড়ে গিয়েচে, সে স্মৃতি ওর মায়ের মনে এখনও অতি স্পষ্ট । চোখের জল গড়িয়ে পড়েচে বালিশের গায়ে । মাতৃহৃদয়ের নিঃশঙ্ক ব্যথার অভিব্যক্তি। যতীন বুঝলে, মায়ের এই চোখের জল, বুকের চাপ