পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᎼ8 বিভূতি-রচনাবলী বাড়ীতে আর কেউ নেই, যতীনের মা ধড়মড় করে উঠে বল্পে-ও শৈল, শৈল—কোথায় গেলি ? মাগো, আমায় সবাই মিলে খেলে । কেউ যদি বাড়ী থাকবে—ও শৈল— রোগিণীর আহবানে কোথা থেকে আট দশ বৎসরের একটি বালক ছুটতে ছুটতে এসে বলে— কি কাকমা-কি হয়েচে । ' —আমার মাথামুণ্ডু হয়েচে । দুপুর বেলা বেরোয় কোথায় সব, বাড়ীতে কেউ নেই— মনিঅৰ্ডার এসেচে, নে পিওনের কাছ থেকে ; আমার এমন জর এস্নেচে যে মাথা তুলতে পারচিনে —শৈল কোথায় ? —দিদি তাস খেলচে পাচুদের বাড়ী— বালক মনিঅৰ্ডারের ফৰ্মখানা হাতে নিয়ে আবার ঘরে ঢুকলো । ওর কাকীমা বল্লে— ক’টাকা ? বালক ঘাড় নেড়ে বল্পে—সে জানে না। বাইরে থেকে পিওন চেচিয়ে বল্লে—সাত টাকা মা ঠাকরুণ—সইটা করে দেন– t পিওন ফর্ম সই করিয়ে টাকা দিয়ে চলে গেল । বালক টাকা নিয়ে এসে রোগিণীর হাতে দিতে রোগিণী তিন চার বার গুনে গুনে বালিশের পাশে রেখে দিলে । যে ভাবে বৌটি আদরে যত্নে সতর্কতার সঙ্গে টাকা কয়টি বার বার গুনলে তাতেই যতীনের মনে হোল এই দরিদ্র সংসারে গৃহলক্ষ্মীর কাছে ওই সাতটি টাকা সাতটি মোহর। সে যদি বড় হয়ে মায়ের হাতে থলিভর্তি টাকা এনে দিতে পারতো ! আজি সত্যিই তার মনে হোল, পুষ্প তাকে যতই টাকুক, উচ্চ স্বর্গের উপযুক্ত নয় সে। মাটির পৃথিবী তাকে স্নেহময়ী মায়ের মত আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় শত বন্ধনে, তার মনে অনুভূতি জাগায় এই সংসারের ছোটখাটো মুখদুঃখ, আশাহত অসহায় নরনারীর ব্যথা । তার এই মাকে একলা ফেলে, আশালতাক্ষে নিষ্ঠুর ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে সে কোন স্বর্গে গিয়ে মুখ পাবে ? 桑 যতীনের অদৃত উপস্থিতি ও স্পর্শহীন স্পর্শ ওর মাকে কথঞ্চিৎ স্বস্থ করে তুললে । পুপ এসে বলে—তোমার মাকে ছবি দেখাবো যতীনদা ? যেন এক অদৃতা দেবতা ওঁর ছেলের মত এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্চে—মিষ্টি কথা বলচে–দেখাবো ? —পাশের বাড়ীর বৌটি কেমন ? —ঘুম পাড়িয়ে এলুম। মাথা ধরেছিল, সারিয়ে দিয়ে এলুম। — খাওর পিসশাশুড়া কি করচে ? বুড়িটা ? . o পুপ হেসে বল্লে—পিসশাশুড়ার অত দোষ দিও না। বৌটির চরিত্র ভাল না । , যতীনের মনে পড়লে আশালতার কথা—সে একটু তিক্তস্বরে বল্লে—মেয়েমানুষ কিনা, তাই অপর মেয়েমামুষের চরিত্রের দিক্‌টীতে আগে নজর পড়ে। কই আমাদের তো পড়ে না ? দেখেই বুঝে ফেল্পে ? পুপ বলে—তা নয়, ওর মনে সব কৰা লেখা রয়েচে আমি পড়ে এলুম। ও চিন্তা করচে ওর একজন প্রণয়ীকে, নাম তার হরিপদ, এই দুপুরে নদীর ঘাটে গিয়ে তার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা