পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান S80 অল্প পরেই ওরা এক বিস্তীর্ণ মরুপ্রাস্তরের স্তায় উষর স্থানে এসে পড়লো। তার চতুর্দিকের চক্রবাল-রেখা ধুমবাম্পে সমাচ্ছন্ন—যেন মনে হয় কাচা বনে লতাপাত পুড়িয়ে অজস্র ধূম স্বষ্টি করে দাবানল জলছে। অথচ অগ্নিশিখা দৃপ্তমান নয়—শুধুই মরুময় ধুধু প্রাস্তর, মাঝে মাঝে বৃক্ষলতাহীন প্রস্তরস্তুপ। ওরা সেই জনহীন মরুদেশের ওপর দিয়ে শূন্তপথে ধীরগতিতে যেতে যেতে দেখলে সে রাজ্য সম্পূর্ণরূপে জনহীন, বৃক্ষলতাহীন। সেখানকার আকাশ নীল নয়, ঘোলাটে ঘোলাটে শুভ্র লঘু বাম্পে ঢাকা । পুষ্পের মনে হোল ভাস্ত্র মাসের গুমটের দিনে পৃথিবীর আকাশে যেমন সাদা মেঘ জমে থাকে—অনেকটা তেমনি । পুষ্প বল্পে—এই জায়গাটা যেন কেমন বিশ্রী— রঘুনাথদাস বলেন—এই সব ভূবর্লোকের নীচু স্তর, পৃথিবীতে যাকে নরক বলে। এ অনেক দূর বোপে রয়েচে-হাজার হাজার ক্রোশ চলে যাও, পৃথিবীর ঠিক ওপরে পৃথিবীর চারিপাশ ঘিরে এ রাজ্য বর্তমান। অথচ পৃথিবীর লোকের কাছে সম্পূর্ণ অদৃত। এখানকার বাসিন্দারা আবার ভুবলোকের কোনো উচ্চ স্তর দেখতে পায় না। —হাজার হাজার ক্রোশ ! এমন জনহীন ! —তারও বেশি। যতদূর চলে যাও, এ অদ্ভুত লোকের আদি অস্ত পাবে না। বহু হাজার ক্রোশ চলে যাও, এমনি । এ কোনো বাইরের অবস্থা নয় । এখানকার বাসিন্দাদের মানসিক-অবস্থাপ্রস্থত । এরাও অনেক সময় যতদূর যায়—এ জনহীন মরু-পাথরের দেশের আদি-অন্ত পায় না খুজে, অন্য কোনো প্রাণীকেও দেখতে পায় না। চন্দ্র নেই, সূর্য নেই, তারা নেই—এই রকম চাপা আলো-কখনো কালো হয়ে আসে, ঘোর কালে, পৃথিবীর অমাবস্তার মত। উপনিষদে এ লোকের কথা বলে গিয়েচে—অস্থর্য নাম তে লোক অন্ধেন তমসাবৃতা—এই সে ভীষণ অন্ধতমিস্র লোক- একশো বছর পর্যন্ত হয়তো টিকে যায় সেই অন্ধকার কোনো কোনো পাপী আত্মার কাছে। সে হতভাগ্য আশ্রয় ও আলো খুজে, সঙ্গী খুজে হয়রান হয়ে পড়ে । পুষ্প শিউরে উঠলো। অস্পষ্ট স্বরে বল্পে—একশো বছর ধরে অমাবস্তা ! রঘুনাথদাস হেসে বল্পেন—কন্য, জন্ম-মরণ-ভীতি-ভ্রংশী শ্ৰীকৃষ্ণমুরারির শরণ নাও-যেন এখানে কোনোদিন আসতে না হয় । এ হোল হিরণ্যগৰ্ভদেবের রাজ্য, তিনি এখানে শাসক ও পালক । —তিনি কে? —ব্রহ্মের তিন রূপ—স্থলরূপে বিরাট, সূক্ষ্মরূপে হিরণ্যগর্ত, কারণস্বরূপ ঈশ্বর । —প্রন্থ, পৃথিবীর গ্রহদেব বৈশ্ৰবণ কে ? —তিনি পূর্বকল্পের মহাপুরুষ । পৃথিবীর প্রজাপতি । —তবে আপনার গোপাল কে ? রঘুনাথদাস প্রসন্ন হাস্যে বলেন-গোপাল সব। আমি ওকেই জানি। ওই ব্রহ্ম, ওই আত্মা, ওই ভগবান । আমি আর কারো খবর রাখিনে । ব্রহ্মের সাকার রূপ, জ্ঞানচক্ষে দেখলে মায়িক রূপ বটে। কিন্তু আমার চোখে গোপাল ব্ৰহ্মাও পরিপূর্ণ করে রেখেচে । আমার আর