পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবষান SN3(? সন্ন্যাসী পুনরায় হেসে বল্লেন-হবে, হবে। আচ্ছা যাবে, কথা দিলাম। প্রেমভক্তি নিই না নিই স্বতন্ত্ৰ কথা । তোমাকেও তো আমি বটুচক্র ভেদ করে অদ্বৈতজ্ঞান পাইয়ে দিচ্চি না জোর করে ? 動 কিছুক্ষণ পরে ওরা সবাই সন্ন্যাসীর পিছু পিছু পৃথিবীর একস্থানে নেমে এল । স্থানটি দেখেই ওরা বুঝলে, লোকালয় থেকে বহু দূরে কোনো এক নিবিড় অরণ্যের মধ্যে ওরা দাড়িয়ে । সম্মুখে একটি পার্বত্য নদী, কিন্তু নদীগর্ভে কোথাও মাটি বা বালি নেই—সমস্তটা পাষাণময়, চওড়া সমতল, মন্থণ । প্রায় একশো হাত পরিমিত স্থান কি তার চেয়ে বেশি এমনি আপনাআপনি পাথর বাধানো । তারই মধ্যভাগ বেয়ে ক্ষুদ্র নদীটি ক্ষুদ্র একটি জলপ্রপাতের স্বষ্টি করে মর্মর কলতানে বয়ে চলেচে । উভয় তীরে নিবিড় জঙ্গল, মোট মোটা লতা এ-গাছ থেকে ওগাছে ছলচে ; গভীর নিশীথকাল পৃথিবীতে, আকাশে ঠিক মাথার ওপরে চাদ, গভীর নিঃশবতার মধ্যে পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নালোকে সমস্ত অরণ্যভূমি মায়াময় হয়ে উঠেচে। ওরা মুগ্ধ হয়ে সে অপূর্ব অরণ্য-দৃপ্ত দেখচে, এমন সময়ে বনের মধ্যে বাঘের গর্জন শোনা গেল, দ্বিতীয়বার শোনা গেল আরও নিকটে । যতীন সভয়ে বলে উঠলো—ওই! চলুন পালাই— অল্প পরেই ওপারের বনের লতাপাত নিঃশবে সরিয়ে প্রকাও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হাড়ির মত মুখ করে নদীজলে নামতে দেখা গেল এবং তার জল খাওয়ার ‘চকু চকু’ শব্দ বনের ঝিল্পীরবের সঙ্গে মিলে এই গম্ভীর রহস্যময় রজনীর নৈঃশব্দ মুখর করে তুলতে লাগলো। পুষ্প বল্লে—ভয় কি যতীনদ তোমার এখন বাঘের ? ক্ষেমদাস মুগ্ধ দৃষ্টিতে এই অপূর্ব শোভাময় জ্যোৎস্নাপ্লাবিত নির্জন বনকাস্তারের দৃপ্ত উপভোগ করছিলেন। দুহাত জুড়ে নমস্কার করে বরেন—ম্বন্দর। মুন্দর ! নমস্কার হে ভগবান, ধন্ত তুমি, আদি কৰি তুমি জগৎশ্রষ্ট ! কর্ণামৃতে ঠিকই বলেচে —মধুগন্ধি:-- সন্ন্যাসী বজেন-ব্ৰহ্মই জগৎ হয়ে রয়েচেন, য ওষধিযু যে বনস্পতিযু—তিনিই সর্বত্র। সামনে যা দেখচো এও তিনি, তার বিশ্বরূপের এক রূপ—তবে অত ভাবুকত আমাদের আে না, ইনিয়ে-বিনিয়ে বর্ণনা করা আসে না । 粵 ক্ষেমদাস হেসে বল্পেন—আসবে কি হে ! তাহোলে তো তুমি উপনিষদ তৈরী করে বসতে। তোমাদের সঙ্গে উপনিষদের কবিদের তফাৎ তো সেইখানে। তারা ব্রহ্মজ্ঞ ছিলেন, আবার কবিও ছিলেন । তোমার মত নীরস ব্রহ্মবিৎ ছিলেন না । ভগবানও কবি । উপনিষদে কি বলেনি তাকে, কবির্মনীষী পরিভু; স্বয়ভূঃ- • সন্ন্যাসী বলেন—চলো চলে, যে জন্যে এসেচি। উপনিষদে কবি বলেচে ৰিনি ভ্ৰষ্ট তাকে । যিনি প্রজ্ঞার আলোকে এক চমকে ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান দর্শন করেন, চিন্তা দ্বারা র্যাকে বুঝতে হয় না, তিনিই কবি । যতীন বঙ্গে-প্রভু, এ কোন জায়গা পৃথিবীর ? —এ হোল বাস্তার রাজ্য, মধ্যভারতের । এই নদীর নাম মহানদী, উড়িষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমূত্রে পড়েচে। এখানে নদীর শৈশবাবস্থা দেখচ, সবে বেরিয়েচে অদূরবর্তী পাহাড়শ্রেণী