পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯხrbr বিভূতি-রচনাবলী বীণা বল্লে—ওই তোদের বাড়ীর দরজাটা—আমি চলি সই। এর পরে একলা খেতে পারবো না— o বীণা চলে গেল অন্ধকার বাশবনের পথটা দিয়ে এক একা। আশা সই-এর অপশ্ৰিয়মাণ মূর্তির দিকে চেয়ে রইল—তারপর যখন আর দেখা গেল না তথন সামনের দিকে চেয়েই ভয়ে ওর বুক কেঁপে উঠলো - কি ওখানে ? ও চীৎকার করে ডাক দিলে—ও সই—ও বড়দি– ওর সামনে বাড়ীউলি মাসীর দরজা, যে দরজাটা খুলে সকালে আজই পালিয়ে গিয়েছিল লুকিয়ে। ওর চীৎকার শুনে দরজাটা খুলে নেত্যনাবাণ দু'পাটি দাত বের করে এগিয়ে এসে বল্পে – বাপরে ! কি তোমার কাও ! কোথায় গিয়েছিলে সারাদিন ?••• তার পর ওর হাত ধরে টানতে টানতে বল্লে—চলো, চলে, রাত হয়ে গিয়েচে—শোবে এসো, শোবে এসো... &. কতকাল যে কেটে গেল মানিকতলার বাড়ীউলি মাসীর সেই বাড়ীটাতে । তার কোন হিসেব নেই, কোনো লেখাজোখা নেই—আশার মনে হয় বাল্যকাল থেকে তার বিবাহের সময়, তারপর তার সমস্ত বিবাহিত জীবন নিয়ে যতটা সময়ের অভিজ্ঞতা তার আছে—তেমনি কত বাল্যজীবন, কত বিবাহিত জীবন, কত বৈধব্যজীবন এবং কত মানিকতলার জীবন তার কেটে গেল—সে কিন্তু সেই এক ভাবেই রইল একই জায়গায় স্থাণুবৎ আচল । নেত্যদা তাকে ছাড়ে না। কতবার সে পালিয়ে গিয়েচে–জীবনের কত জানা অজানা কোণে । কত বছরের ব্যবধান রচনা করেচে সে বর্তমান জীবনের ও সেই সব অতীত দিনের শান্তি ও পবিত্রতামণ্ডিত অবকাশের । কিন্তু কোনো ব্যবধান টেকে না । •সব এসে মিশে যায় বর্তমানের এই কলকাতা মানিকতলার বাড়ীউলি মাসীর বাড়ীর দরজায় এই ঘরটাতে, ওই তক্তপোশটাতে । এখন যেন তার মনে হয়—এসব যা ঘটেচে, এ আসল নয়, সব যেন অবাস্তব, স্বপ্লবৎ•••এ সব ছায়াবাজি...জীবনটাই যেন একটা মস্ত ছায়াবাজি হয়ে গেল তার ••• সই, মা, ভাই, বোন, স্বামী, ছেলে-মেয়ে কিছুই নিত্য নয় তার জীবনে•••আসে আবার চলে যায় বাড়াউলি মাসীর এ বাড়ীটাই কি এদের মধ্যে একমাত্র সত্যি ? আর নেভাদা, আর এই সরু রান্নাঘরটা...আর ওই ছোট ঘরের ছোট তক্তপোশটা ? এর কি কোনো শেষ হবে না, এ দিনের এই সব টিকে থেকে যাবে চিরকাল ? কোনটা সত্যি, কোনটা স্বপ্ন আজকাল সে বুঝতে পারে না। যেটাকে সত্যি ভেবে হয়তে অঁাকড়াতে যায়—সেটাই মিথ্যে হয়ে স্বপ্ন হয়ে যায় । তার কি কোনো রোগ হোল ? এমন সাধের, এমন আদরের, এমন আশা-জানন্দের জীবনের শেষকালে এ কি ঘটলো ? কোথায় চলে গেল স্বামী, কোথায় গেল বাপের ভিটে, শ্বশুরের ভিটে ?. এ কি-ভাবে পাগল বা বুদ্ধিহীন কিংবা