পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আহবান দেশের ঘরবাড়া নেই অনেকদিন থেকেই । পৈতৃক বাড়ী যা ছিল ভেঙেচুরে ভিটেতে জঙ্গল গজিয়েছে। এ অবস্থায় একদিন গিয়েচি দেশে কিসের একটা ছুটিতে । গ্রামের চকোত্তি মশায় বাবার পুরাতন বন্ধু । আমায় দেখে খুব খুশি হোলেন । বল্পেন —কতকাল পরে বাবা মনে পড়লে দেশের কথা ? প্ৰণাম করে পায়ের ধূলো নিলাম। বল্লেন—এসো, এসে, বেঁচে থাকে, দীর্ঘজীবী হও । বাড়ীঘর করবে না ? —আজ্ঞে সামান্ত মাইনে পাই— —তাতে কি ? গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে, এতে আর সামান্ত মাইনে বেশি মাইলে কি ? আমি খড়বাশ দিচ্চি, চালাঘর তুলে ফেলো, মাঝে মাঝে যাতায়াত করে । আহা নরেশের ছেলে, দেখেও সুখ । ক’দিনই বা আছি । বাস করো গায়ে । আরও অনেকে এসে ধরলে, অন্তত খড়ের ঘর একটা ওঠাতে হবে । অনেক দিন পরে গ্রামে এসে লাগচে ভালোই। যাদের বাল্যকালে ছোট দেখে গিয়েচি, তাদের আর চেনা যায় না, যাদের যুবক দেখে গিয়েছিলাম, তারা হয়েচে বৃদ্ধ । বড় আমবাগানের মধ্য দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছি, আমগাছের ছায়ায় একটি বৃদ্ধার চেহারা ভারতচন্দ্র-বর্ণিত জরতীবেশিনী অন্নপূর্ণার মত । কোনো তফাৎ নেই, ডান হাতে নড়ি ঠক ঠক করতে করতে বোধ হয় বা বাজারের দিকেই চলেছে। বগলে একটা ছোট থলে । বুড়ীকে দেখেই আমি দাড়িয়ে গেলাম। এ ধরনের বুড়ীকে দেখে আমার বড় মায়া হয়— নারী-রূপের এক অপূর্ব পরিণতি । জিজ্ঞেস করলাম—কোথায় যাবে ? —বাজারে বাবা— 繆 বুড়ী আমায় ভাল না দেখতে পেয়ে কিংবা না চিনতে পেরে ডান হাত উচিয়ে তালু আড় ভাবে চোখের ওপর ধরলে । இ. বল্লে—কে বাবা তুমি ? চেনলাম না তো ? —চিনবে না। বঁাড় জ্যেপাড়ার নরেশ বাড়জ্যের ছেলে। আমি অনেকদিন গায়ে আসিনি— . 馨 — তা হবে বাবা । আমি আগে তো এপাড়া-ওপাড়া যাতাম আসতাম না-তিনি ৰাকৃতি অভাব ছেলো না কোনো জিনিসের । গোলা-পোরা ধান, গোয়াল-পোৱা গরু— --তোমাকে তো চিনতে পারলাম না বুড়ী ? —আমার তো তেনার নাম করতি নেই বাবা । করাতের কাজ করতেন। বলে সে জিজ্ঞাস্থদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকে, অর্থাৎ আমি চিনতে পেরেটি কি না ।