পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 উপলখও ১১ কক্ষনো ন। তুমি বিশ্বাস কর— —না-—না, বিশ্বাস অবিশ্যি করিনি। যাই হোক, যদি কিছু বলেও থাকো বুড়ীকে বারণ করে দেবে আর না বলে। গ্রাম ভাল নয়, ও নিয়ে মেয়েটার নামে একটা কথাকথি যদি হয়— —নিশ্চয়। তুমি বিশ্বাস করো ভাই, আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি নে। বুড়ী তার পরদিন যেমন সকালে এসেচে বকলুম ওকে। কে তাকে এসব কাণ্ড করতে বলেচে। ঘটকালি করতে ডেকেছিল কেউ তাকে? গাঁয়ে এই নিয়ে শেষে একটা কথা উঠবে, পাড়াগাঁ জায়গা খারাপ। তুমি বাপু এখানে আর এসো না। বুড়ী ফ্যাল্ ফ্যাল্ চোখ চেয়ে বল্পে—বকিস্ নে অ গোপাল, মোরে বকিস নে। তা তুই ও মেয়েডারে বিয়ে না করিস—অন্য কোনো মেয়ে বিয়ে কর। পুঁটিরে তোর পছন্দ হয়নি, না? ধম্কে উঠে বল্লাম-আবার ওইসব কথা! নিতান্ত সরলা সেকেলে বুড়ী, কিছু বোঝেও না। সত্যিই এই ঘটনা নিয়ে গ্রামে একটু কথাবার্তার সৃষ্টি হলো। বুড়ীর ওপর খুব চটে সকালবেলাটা আর ঘরেই থাকিনে, পাছে বুড়ী এসে জ্বালাতন করে। দশ-বারোদিন পরে একদিন দুপুরে ঘুমিয়ে উঠেচি, বাইরে বুড়ীর গলা শোনা গেল—অ মোর গোপাল! ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বল্লাম—কি? আবার এসেচ কেন এখানে? —একটা বাতাবী নেবু নিয়ে এয়েলাম তোমার জন্যি— —দরকার নেই বাতাবী নেবুতে। যাও এখন – বিরক্তি নিতান্ত অকারণ নয়। মাত্র চার-পাঁচদিন আগে মুখুজ্যেবাড়ীর ঘটনা নিয়ে আমার জ্ঞাতি খুড়ো আমায় দুকথা শুনিয়ে দিয়েচেন। বছরখানেক আর গ্রামে যাইনি এর পরে। বোধ হয় দেড় বছরও হোতে পারে। একবার শেষ শরতে পূজোর ছুটির পর কাশী থেকে বেড়িয়ে ফিরে কলকাতায় এসে দেখি তখনও দিনদুই হাতে আছে। গ্রামেই গেলাম এই দুদিন কাটাতে। গ্রামে ঢুকতেই প্রথমে দেখা পরপ্ত সর্দারের বোঁ দিগম্বরীর সঙ্গে। দিগম্বরী অবাক হয়ে বল্লে—ও মা, আজই তুমি এলে বাবাঠাকুর? সে বুড়ী যে কাল রাতে মারা গিয়েচে। তোমার নাম করলে বড্ড। ওর সেই পাতানে মেয়ে আজ সকালে বলছেল— আমি এসেচি শুনে বুড়ীর নাতজামাই দেখা করতে এল -বাবু এসেচেন? সাহায্য করুন, কাফনের কাপড় কিনতি। যা দাম কাপড়-চোপড়ের! আমার মনে পড়লো বুড়ী বলেছিল সেই একদিন—আমি মরে গেলে তুই কাফনের কাপড় কিনে দিস বাবা। ওর স্নেহাতুর আত্মা বহুদূর বারাণসী থেকে আমায় কি ভাবে আহবান করে এনেচে। আমার মন হয়তে ওর ভাক এবার আর তাচ্ছিল্য করতে পারেনি। কাপড় কেনবার টাকা দিলাম। নাতজামাই বলে গেল—মাটি দেওয়ার সময় একবার ঘাবেন এখন বাবু। বেলা বারোটা আন্দাজ যাবেন-