পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বিভূতি-রচনাবলী এবার কোথাও যাওয়া যাক-বুঝলে ? কত পয়সা তো কতদিকে খরচ হচ্ছে । টাকা চল্লিশ হলে একবার কাশীটা ঘুরে আসা হয়। তখন তর্ক বাধে দুজনে । কাশী না গয়া কিংবা সাওতাল পরগণা। অবশেষে সেদিন ব্যাপার মুলতুবী থাকে। পরদিন আবার শুরু হয় আলোচনা—কি বল, তা হলে ভাগলপুরই ঠিক করা যাক। পাহাড় কখনও দেখা হয়নি । ভাগলপুরে কি পাহাড় আছে ? ঠিক সংবাদ দুজনের কেউ জানেন না। এমনিভাবে পুজো এসে পড়ে, এই একমাসে বন্ধ নাম উচ্চারিভ হয় ভ্রমণ সম্পর্কে—পেশোয়ার, কাশ্মীর থেকে শুরু করে দিল্লী, জয়পুর, বৃন্দাবন, শিলং, এমন কি বীরভূম জেলার নলহাটি পর্যন্ত । শেষ পর্যন্ত কোনও বার কোথাও যাওয়া ঘটে না, শম্ভু ডাক্তারের তিন মাসের দোকান ভাড়া বাকি পড়তে বাড়ীওয়ালা নালিশের তয় দেখায়, গোপীকৃষ্ণবাবুব ছোট ছেলে টাইফয়েডে পডে—যায় সব তেন্তে । বহু বৎসর ধরেই এমন চলেছে। তবুও এরা ছাড়বার বা দমবার পাত্র নন। শ্রাবণ মাসের শেষ থেকে শুরু করে পূজোব সময় পর্যস্ত ভ্রমণের সম্বন্ধে আলোচনা এদের কামাই নেই। এতে তো পয়সা খরচ হয় না, অথচ টাইমটেবিল ঘেটে পাঁচটা দূরের নাম পড়ে বেশ আনন্দ পাওয়া যায় । আজও গোপীকৃষ্ণবাবু চ খেতে খেতে বললেন—আর মাসখানেক বাকি পূজোর । এবার কিন্তু কোথাও যাওয়া নিতান্ত দরকার। ঠিক করে ফেলা যাকৃ আজই, বুঝলে ? টাইমটেবিল আছে তো ? টাইমটেবিল তৈরী যারা কখনও কোথাও বেড়ায় না, তাদের টেবিলে সর্বদা টাইমটেবিল মজুদ থাকে। শম্ভু ডাক্তার খাপ থেকে চশমা খুলে টাইমটেবিলের পাতা ওলটান । —আচ্ছা, চিত্ৰকুট জায়গাটা নাকি খুব ভাগ । তুমি জানো কিছু ? এক অন্ধ আর এক অন্ধকে পথ দেখায় । গোপীকৃষ্ণবাবু বলেন –ষ্ঠ্যা-তা বেশ ভাল জায়গা । • –ভাড়াটা দেখ হে–এবার ভাই আর অমত কোরো না । চলো চিত্রকূটই যাওয়া যাক । গোপীকৃষ্ণবাবু ন্যায্যপক্ষেই বলতে পারতেন, তার মতামতের অভাবেই যে এতকাল ভ্রমণ বন্ধ আছে, একথা সত্যি নয়। কিন্তু তিনি কোনও প্রতিবাদ করেন না। চিকুটের ভাড়া বেরুলো টাইমটেবিল খুজে । শম্ভু ডাক্তার বললেন—ওর ওপর ধরে আরও কুডিটে টাকা— খাওয়া-দাওয়া—পান-সিগারেট—যুদ্ধের বাজার, বুঝলে না ? —সে তো বটেই । --তা হলে এবার আর অমত কোরো না। এখন থেকে রেডি হওয়া যাক, কি বলে ? পূজো তো এলো । দুই বন্ধুতে আরও ঘন্টা দুই বসে ভ্রমণের নানা পরামর্শ করেন। বাড়ী থেকে খাবার তৈরি করে নেওয়া উচিত। . সব জিনিস আক্রা। বেডিং কি কি সঙ্গে নেওয়া যায় । শঙ্কু ডাক্তার মুখে মুখে বলতে লেগে গেলেন-ধরে একটা মশারি, বালিশ–