পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२९ বিভূতি-রচনাবলী যেতেন বাড়ী থেকে, দু-একমাস কোন খবর আসতো না, মা কান্নাকাটি করতেন, হঠাৎ বাবা একদিন এসে হাজির হোতেন । দিন এভাবেই চলতো । তেরো বছর বয়সে আমার বিয়ে হলো আড়ংঘাটার কাছে এক গ্রামে। বিয়ের দিনকতক আগে নম্বদের বাড়ী গিয়েছিলাম। নম্বর মার শরীর খারাপ, নস্থ রান্নাঘরে ভাত রাখছে। উনুনের অঁাচে ওর ফর্স মুখ রাঙা হয়ে গিয়েচে। ওদের বাড়ীর কোন বিলিব্যবস্থা নেই। অনেকগুলো ভাই নম্বর, তারা কেউ বাইরে পড়ে, কেউ কাজ করে। নম্বর মার শরীর চিরকগণ, সংসারের রান্নাবান্নার ভার নস্কমায়ার উপর। আজ অনেকদিন থেকেই নম্বর এই অবস্থা দেখছি । নম্বর অবস্থা দেখে সত্যিই কষ্ট হলো। নম্বর মুখের দিকে চাইবার কেউ নেই, ভাইয়ের সব স্বার্থপর, সংসার চালানোর ভার ওর ওপর ফেলে দিয়ে সবাই তারা নিশ্চিন্ত হয়ে আছে । নক্সমামা আমায় দেখে হেসে বল্পে—আয় পাচী, বোস । কাল দুই পেতেছিলাম, দইট বসেনি। উকুনের পাড়ে রেখে দেবো, কি বলিল ? যত সব মেয়েলি গল্প নম্বর। সাধে কি ওকে সকলে বলে জনাৰ্দন মুখুয্যের বিধবা মেয়ে ? আমায় বয়ে-কাল বুঝলি, এক কাঠা মুগের ডাল তাঙ্গলাম, ভাউলাম। বেলা গেল ডালডুল করতে। গা-হাত-পা ব্যথা । বল্লাম—তুমি ডাল ভাজলে ? সত্যি ? —ই্যা রে । নইলে কে করবে ? আবার কাল একগাদা ময়লা কাপড় সোড়া-সাবান দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে । o দুঃখিত স্বরে বল্লাম - ওসব মেয়েলি কাজ । তুমি ওসব কর কেন ? আমার ডাকলে না কেন ? আমি ভাল ভেজে দিতাম । নস্থ বল্লে—আহা! আমি না-পারি কি ? তোকে আবার ডাকতে যাব কেন ? —লেখাপড়া করবে না নম্বমামা ? এসব কাজ কি তোমার সাজে । পুরুষমানুষ, লেখাপড়া কর l. —আমায় কে পড়াবে ? দাদারা এক পয়সা দেবে না। তা ছাড়া মার শরীর খারাপ, আমি বাড়ী থেকে গেলে রান্নাবান্না কে করে বল। পড়বার খরচ জুটলেও আমার পড়া হোত না । আমি বসে বসে ওর ফুটনে কুটে দিলাম। আমার বিয়ের কথা বল্লাম। নক্সমাম বিশেষ কোনো আগ্রহ প্রকাশ করলে না। ও যদি একটুও আগ্রহ প্রকাশ করতে, শুনতে কোথায় আমার বিয়ে হচ্ছে ইত্যাদি, তাহলে আমার ভালো লাগতো। কিন্তু নাঃ, সে মুখ আমার অদৃষ্ট নেই। নম্বমামা একটা কথাও জিজ্ঞেস করলে না সে সম্বন্ধে। আমার বিয়ের রাত্রে নস্ক নেমস্তন্ন খেয়ে এল পেট পুরে, কিন্তু না এল একবার বিয়ে দেখতে, না একবার বাসরঘরে উকি মেরে দেখলে। আমার মনটা যেন কেমন ফাকা ফাক,