পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ఫి এলে এই অবস্থায় কে দেখে, কে শোনে, কে একটু জল মুখে দেয় । আমাদের তো সব সময় আসা ঘটে ওঠে না, বুঝতেই তো পারে, নানারকম ধান্ধাতে ঘুরতে হয়। নইলে ইচ্ছে তো করে, তা কি আর করে না ?...ইত্যাদি। এ কথার কোনো উত্তর সে দিত না । ○ আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি যতীন সেরে উঠলো । যার কেউ নেই, ভগবান তাকে বোধ হয় বেশিদিন যন্ত্রণ ভোগ করান না । হয় সারান, নয় সারাবার ব্যবস্থা করেন । বৈকালের দিকে নদীর ধারের মাঠে সে বেড়াতে গেল। একটা বড় জায়গায় একটা বড় বাবলা কাঠের গুড়ি পড়ে । চারিদিক ঘিরে সেখানে বনঝোপ । পড়ন্ত বেলায় পার্থীর দল কিচ কিচ করচে, কেলে-কেড়ি লতায় শরতের প্রথমে স্বস্নিগ্ধ ফুল ফুটেচে, নির্মেঘ আকাশ অদ্ভুত ধরনের নীল । গাছের গুড়িটার ওপর সে দেহ এলিয়ে দিয়ে আধ-শোওয়া অবস্থায় রইল। শরীর দুর্বল, বেশিক্ষণ দাড়াতে বা বসতে কষ্ট বোধ হয় । ওর মনে একটা ভয়ানক কষ্ট...বিশেষ করে এই অসুখটা থেকে ওঠবার পরে । মনটা কেমন দুর্বল হয়ে গিয়েচে রোগে পড়ে থেকে । নইলে যে আশালত অত নিষ্ঠুর ব্যবহার করেচে তার সঙ্গে, রোগশয্যায় পড়ে সেই আশালতার কথাই অনবরত মনে পড়বে কেন। শুধু আশালতা . আশালতা ••• না, চিঠি সে দেবে না—দেয়ও নি। মরে যাবে তবুও চিঠি দেবে না। মিথ্যে অপমান কুড়িয়ে লাভ কি, আশালতা আসবে না। যদি না আসে, তার বুকে বড় বাজবে, পূর্বের ব্যবহার সে খানিকটা এখন ভুলেচে, স্বেচ্ছায় নতুন দুঃখ বরণ করার নিবুদ্ধিত তার না হয়। সে অনেক দুঃখ পেয়েচে, আর নয় । সব মিথ্যে সব ভুল-“প্রেম, ভালবাসা সব দুদিনের মোহ ৷ মূৰ্খ মানুষ যখন মজে, হাবুডুবু থায়, তখন শত রঙীন কল্পনা তাতে আরোপ ক’রে প্রেমাম্পদকে ও মনের ভাবকে মহনীয় করে তোলে। মোহ যখন ছুটে যায়, অপশ্ৰিয়মাণ ভাটার জল তাকে শুষ্ক বালুর চড়ায় এক ফেলে রেখে কোন দিক দিয়ে অস্তৰ্হিত হয় তার হিসেব কেউ রাখে না । এই নিভৃত পতাবিতানে, এই বৈকালের নীল আকাশের তলে বসে সে অনুভব করলে জগতের কত দেশে, কত নগরীতে, ক্ষত পল্লীতে কত নরনারী, কত তরুণ, কত নবযৌবন বালিকা প্রেমের ব্যবসায়ে দেউলে হয়ে আজ এই মুহূর্তে কত যন্ত্রণ সহ করচে। নিরুপায় অসহায় নিতান্ত দুঃখী তারা। অর্থ দিয়ে সাহায্য ক'রে তাদের দুঃখ দূর করা যায় না । কেউ তাদের দুঃখ দূর করতে পারে না। এই সব দুঃখীদলের সেও একজন। আজ পৃথিবীর সকল দুঃখীর সঙ্গে সে যেন একটা অদৃষ্ঠ যোগ অনুভব করলে নিজের ব্যথার মধ্যে দিয়ে। দারিদ্র্যকে সে কষ্ট বলে মনে করে না। কেউ তাকে ভালবাসে না, এই কষ্টই তাকে যন্ত্রণা