পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• বিভূতি-রচনাবলী বীণাপাণি আসিয়া জেঠামশায়ের কাছে গিয়া বসিল । কৃষ্ণলালবাবু আহলাদে আত্মবিস্তৃতপ্রায় হইলেন। বাম হাতে বীণাপাণির মাথার চুলগুলির মধ্যে আঙল চালাইতে চালাইতে তিনি তাহাকে খাবার খাওয়াইতে লাগিলেন। স্নেহ-মায়ায় তাহার মন পরিপূর্ণ হইয়া গেল। তিনি বলিতে লাগিলেন -মা বাণু, সেই তুই ছেলেবেলায় আমার জলখাবার থেকে জোর করে টপ টপ খাবার তুলে খেতিস, তোর মনে আছে কি? তখন তুই খুব ছোট । মা আমার কত রোগ হয়ে গিয়েছে ( এ কথা সত্য নহে, কারণ বীণাপাণি পূর্বাপেক্ষ বরং স্বস্থই ছিল )—আজ যদি রাম থাকত – এইটে খেয়ে দেখ মা, একে রাজভোগ বলে— এ তুই কখনও খাসনি, এ কলকাতা ছাড়া সব জায়গায় বড় একটা মেলে না। কেমন, ভাল নয় ? বীণাপাণির মনে হইল নীপু, কখনও রাজভোগ খায় নাই । সে খাইতে খাইতে নতমুখে ঘাড় নাড়িল । আরও কিছু খাইবার পর বীণাপাণি বলিল - জেঠামশায়, আর কত খাব ? —আচ্ছা, এই অমৃতিখানা শুধু খা । আর খাপারগুলো তুলে রেখে দে, জামাইকে— তার পর বলিলেন—একটু দাড়া, এই দেখ দিকি, এই ব্রেসলেট-জোড়াটা তোর জন্যে গড়িয়েছি মা, দেখ, দিকি, হাতে হবে তো ? কৃষ্ণলালবাবুর নিজের মেয়ে ছিল না ! বন্ধুকন্যাকে শৈশব হইতেই তিনি নিজের কন্যার ন্যায় দেখিতেন। বহুদিন দেশে আসেন নাই—বিদেশ হইতে দেশে আসিবার সময় প্রথমেই র্তাহার বীণাপাণির কথা মনে পড়িল । প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ করিয়া দিল্লীতে তিনি বীণার জন্য এই ব্রেসলেট-জোড়া প্রস্তুত করিয়াছিলেন । কৃষ্ণলালবাবু ব্রেসলেট-জোড়াটি বীণাপাণিকে দেখাইবার জন্য প্রদীপের সম্মুখে ধরলেন। ক্ষীণ আলোয় তাহার চারিদিকের পাথরগুলি ঝক ঝক করিয়া উঠিল । বীণাপাণি ব্রেসলেট দেখিয়া শুধু আশ্চর্য নয়, মুগ্ধ হইয়া গেল ; সে এরূপ জিনিস কখনও দেখে নাই। ওগুলি কি জলিতেছে, পাথর ? পাথর ঐরকম জলে নাকি ?—ওমা! বিস্ময়ে তাহার মুখ দিয়া কথা সরিল না । কৃষ্ণলালবাবু বলিলেন—দেখি মা, তোর হাত ? বীণাপাণির হাতের সবুজ ও লাল রঙের জার্মানি কাচের চুড়িগুলোকে বিদ্রুপ করিয়া ব্রেসলেটের দামী চুনি, পান্না, হীর-জহরুতগুলি যেন খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। প্রদীপের আলোক শতভাগে ভাগ করিয়া ব্রেসলেট-জোড়া বীণাপাণির হাতে যেন লাল সবুজ নীল আগুনের ফুলকি উড়াইয়া জলিতে লাগিল । 聯 বীণাপাণি নিজের হাতের দিকে চাহিয়৷ অনেকক্ষণ চোখ ফিরাইতে পারিল না। গহনা আবার এ রকম হয় নাকি ? কৃষ্ণলালবাবু বীণাপাণির ভাব দেখিয়া বুঝিলেন যে গহনাটি তাহার পক্ষে অপ্রত্যশিতরূপে স্বন্দর হইয়াছে। ইহাতে তিনি মনে মনে অত্যন্ত খুশী হইলেন। আহ,