পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড Գծ পরে ইচু গিয়ে সন্ধ্যাবেল তার বাড়ী হাজির হল । মুখুজ্যে মশায় বললেন-- কি রে ইচু, কি মনে করে ? ইচু বললে— সালাম বাবু! একটা বডড ভুল করে ফেলিছি! —কি রে ? — আপনার জমির ধানড কাঠাখানেক কেটে ফেলে ঘরে নিয়ে গিয়ে তুলেলাম। তা বাবু, দেড় স্বদ দিয়ে সেই ধানডা আপনারে ফেরত দিতে চাই । —ও, তোর কাজ ইচু! আমি আকাশ-পাতাল হাতড়াচ্ছি। —আজ্ঞে হ্যা বাৰু। সেদিন বড্ড বর্ষা, জমির আল ঠিক করতি পারলাম না। তার পর পরস্পর শুনলাম আপনার জমির ধান কে চুরি করেছে বলে আপনি খোজ করছেন। তখন ভাবলাম বাবুরে বলে আসি । ক্ষেতি লোকসান যখন অজান্তে করে ফেলেছি, তখন দেড় বাড়ি সুদ দেব আপনারে । মুখুজ্যে মশায় বিশ্বাস করলেন ওর কথা । ইচুকে অন্তত চোর বলে কেউ সন্দেহ করবে না। ইচু জন খেটে খায় বটে, কিন্তু আশেপাশে চার-পাচ গ্রামের লোক ওকে মনে মনে শ্রদ্ধা করে। মুখুজ্যে মশায় বললেন, তোকে স্বদ দিতে হবে না ইচু, আমার ধান যা কেটেছিল ও আর ফিরিয়েও দিতে হবে না। ও তোকে দিলাম । ভুলে করে ফেলেছিস তা আর এখন কি হবে । ইচু হাতজোড় করে বললে—ত হবে না মুখুজ্যে মশায়, ও ধান নিতি পারব না, মাপ করবেন। ও ধান আমার গলা দিয়ে নামবে না। আল্লা যা আমায় হাতে তুলে দেবেন, তাই খেয়ে পরান বেচিয়ে রাখব—যা না দেবেন সে আমার হারাম । মুখুজ্যে মশায় জানতেন ইচুকে । খুশী হয়ে বললেন— যাক, দুটো চিড়ে নিয়ে যা, বাড়ীর মধ্যে তোর কাকীমার কাছ থেকে চেয়ে নে । সনেকপুরের বিলট পৌঁছে ইচু দেখলে, জন-মজুর এখনও কেউ এসে পৌছয়নি। এট পছন্দ করে নী সে। বেশি রেটে মজুরি নেব অথচ কাজে আসব দেরি করে, মালিকের কাজে ফাকি দেব, এ তার ভাল লাগে না । ধান কাটে ঘড়ির কাটার মত । এ কাজে তার ফাকি নেই। পথ-চলতি লোকে জিজ্ঞেস করে—কি ধান এটা গো ? —বেনাঞ্চুপি । —এবার ফসল কেমন? . --আড়াই বিশ থেকে তিন বিশ পড়তা হতি পারে । —বিধেয় ? —বিধেয় না কি কাঠায় ? ইচু হা হা করে হাসে পথিকের অজ্ঞতায় ৷ পখিকের উদেশে চেচিয়ে বলে—কাঠায় আড়াই বিশ ধান ফলন হলি কি আমরা জন খেটে খাতাম গোকর্তা ? হ্যা-হ্যা-হ্যা— ·