বিভূতি-রচনাবলী &سb
ঝিঙে পোড়া কেউ কখনও শুনিনি। খেতি পারব না।
—পারব পারব। দে তুই। খাওয়া-দাওয়া শেষ হোল পাকাটির আলো জেলে । তেল নেই। অন্ধকার স্বরদোর। কে আসে, কে যায়, কিছু বোঝা যায় না। কচুঝাড়ে কেয়োবাকার ঝোপে জোনাকি জলছে, উচুনীচু—উচুনীচু। দেবতা ঝিলিক মারছে, রাত্রে বৃষ্টি হবে বোধ হয়। তাত্রের গুমট গরম। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে ইচু যেমন মাহুর পেতে শুয়ে পড়েছে তখনই রাজ্যের ঘুম এসেছে ওর চোখে । আর জ্ঞান নেই। -
কতক্ষণ পরে সে জানে না, লোকজনের গোলমালে ইচু শেখের ঘুম ভাঙল। অনেক লোকের গলা বাইরে। ওরই বাড়ীর উঠোনে ।
—ব্যাপারখানা কি ?
পাড়ার মোড়ল হাফেজ বুড়োর গলা—ও ইচু, ইচু বাড়ী আছ ?
বছিরদি শেখ ডাকছে—ও ইচু, বলি ওঠ—শোন ইদিকি ।
ভোর সবে হয়েছে। কাক-পক্ষী ডাকতে শুরু করেছে। ইচু ধড়মড় করে উঠে বলে চোখ মুছলে। ফজরের নামাজের সময় উত্তীর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু এত লোক ওর উঠোনে কেন ? তাকে ডাকাডাকিই বা কিসের এত সকালে ? বাইরে এসে ঘুমচোখে উঠোনের দিকে চেয়ে ও অবাক হয়ে গেল। পাড়ামৃদ্ধ মামুব সব ওর উঠোনে। সে বিস্মিত স্বরে বললে—কি হয়েছে গো মোড়লের পো ?
বুড়ে হাফেজ মণ্ডল বললে—ইদিকি এস ।
—আগে নামাজটা করে নিই—দেরি হয়ে গিয়েছে।
ইচু ঘরের পেছনের দাওয়ায় নামাজ পেরে নিয়ে আবার সামনে এল। সবাই ওর দিকে একসঙ্গে এগিয়ে এল। সবাই মিলে যেন একসঙ্গে ওকে কি বলতে চায়। ইচু ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে, ওর বুকের ভেতর চিপ টিপ করছে। ভয়ও হয়েছে ওর, নিমি এ সময়ে কোথায় গেল ? হয়েছে কি ? *
অন্য সবাইকে থামিয়ে দিয়ে হাফেজ বললে—এস মোর সঙ্গে ।
ইচু শেখ ওদের পেছনে পেছনে কলের পুতুলের মত চলল। রেল লাইনের দিকে সকলেই যাচ্ছে। নাবাল ক্ষেতের একহাটু জল পার হয়ে সবাই রেল লাইনে উঠল। একটা খেজুর ঝোপের আড়ালে রেল লাইনের ওপর উঠে সবাই দাড়াল থমকে। হাফেজ ডেকে বললে—এখানে
மு: | o
কি ব্যাপার ? ইচু এগিয়ে গিয়ে যা দেখলে তাতে তার মাথা ঘুরে গেল, সে নিজেকে পড়তে
পড়তে সামলে নিলে। রেল লাইনের ওপরে একটা রক্তাক্ত মৃতদেহ—গলা সামনের দিকে গভীরভাবে কাটা, দেহের সঙ্গে একটি অস্বাভাবিক কোণের স্বাক্ট করে চিৎ হয়ে পড়ে আছে।
মৃতদেহ নিমির । ,
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩০০
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
