পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাক্স-বদল প্রতুলের বাবার যা কাও, তার ব্যস্ততার জন্যে সব মাটি। আজ তার রওনা না হলে এমন কিছু ক্ষতি হোত না। সবে স্কুল-কলেজ কাল খুলবে, পূজোর ছুটির পরে, সারা ট্রেনে মোটরবাসে এই বলে লোক। প্রতুলের সে তাড়া নেই, তবে আজই এই ভীষণ ভিড় সহ করে জনতার চাপে উদ্ব্যস্ত হয়ে না গেলে কি চলত না ? হিলি স্টেশন তেইশ মাইল রাস্ত । লোকে মোট-ঘাট ওঠাচ্ছে বাসের ছাদে। বাক্স, সুটকেস, বিছানা। হৈ চৈ গোলমাল। বেশির ভাগ কলেজের ছাত্র, তারা নর্থ-বেঙ্গল এক্সপ্রেসে কলকাতা যাচ্ছে, প্রতুল যাবে আসাম মেলে বা ডাউন নর্থ-বেঙ্গলে । বাস ছাড়ল, প্রতুলের দুপাশে ফুটি দোকানদার, তারা তামাকের ব্যবসা করে, সেই বিষয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে যাচ্ছে । সামনের বেঞ্চিতে একটি ভদ্রলোক স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বসে • একখানা বেঞ্চি ওঁরা জুড়ে বসে আছেন। মেয়েমেয়ে তিন-চারটি, তারা ভীষণ উৎপাত জুড়ে দিয়েছে বাসের মধ্যেই। তাদের দুষ্ট.মি ও চেঁচামেচিতে প্রতুলের মাথা ধরে যাবার উপক্রম হয়েছে। প্রতুল যেখানটিতে অতিকষ্টে একটু জায়গা করে নিয়েছে, ছোট ছেলেট অনবরত সেখানে এসে প্রতুলের কোলের ওপর বসে বাইবের দিকে তাকিয়ে থাকতে চাইছে। এতে কষ্ট ও অসুবিধা যথেষ্ট হলেও ভদ্রতার খাতিরে বিরক্তি চেপে যেতে হচ্ছে প্রতুলের। যুদ্ধের সবে আরম্ভ। বাসেব ওদিকে তিন-চারটি ভদ্রলোক যুদ্ধ সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনায় ব্যস্ত। তাদের কথা শুনে প্রতুলের মনে হোল যুদ্ধ-সম্পর্কিত পরিস্থিতি তাদের নখদপণে, হিটলার বা চেম্বারলেন অপেক্ষাও তারা জিনিসটা ভাল বোঝেন, কারণ তর্কের মধ্যে উভয় পক্ষের ভুল-ভ্রান্তি তারা বিশদভাবে বিচার ও বিশ্লেষণ করে পরস্পরকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। ড্রাইভারের ঠিক পিছনে বাসের সামনের দিকটাতে গোটাকতক রিজার্ভ সিট । দুটি মেয়ে সেখানে বসে, তাদের সঙ্গে একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক, সম্ভবত মেয়ে দুটির অভিভাবক। মেয়ে ছুটির মধ্যে একটির বয়স আঠার-উনিশ বছর, অন্ত মেয়েটির বয়স বাইশ-তেইশ হবে। বয়সে ছোট যে মেয়েটি, সে দেখতে বেশ মুন্দরী, অন্তটির রঙ শুামবর্ণ মুখশ্ৰীও খুব ভাল বলা চলে না, তবুও তার সারাদেহে কেমন এক ধরনের লাবণ্য মাখানে। প্রতুল দু একবার অল্পক্ষণের জন্তে চেয়ে চেয়ে দেখছে । 轎 কয়েক মাইল পরে বালুরঘাট টাউনে এসে বাস দাডাল। এখানে একটি মেয়ে উঠল, পুরুষ বাস্ত্রীও অনেকগুলি একেই বাসেনেই স্থান, তার ওপর এতগুলি যাত্রী কোথায় বসে অনেক নবাগত ষান্ত্রী অগত্য দাড়িয়ে রইল, রিজার্ড সিটে মেয়েটির জায়গা হয়ে গেল । এরই মধ্যে আবার এক কানী ভিখিরি ভিক্ষে করতে আরম্ভ করেছে। সে উঠল বালুরঘাট খেঞ্চে গাড়ে এগার মাইল চলে এসে সারডিহি বলে গ্রামে ; রাজ-কাছারি আছে বলে, এখানে বাল দৃশ মিনিট দাড়ায় ।