পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հօ বিভূতি-রচনাবলী মুলো বলিল—চলুন মিঃ বোস। আজ যাওয়া যাক, আর কি দেখবেন, দেখা তো হয়ে গেল- o নবীনদা বললেন—তোর মুণ্ডু হোল-হতভাগা হস র্যাডিশ ! মূলে বলিল—কি ? —মানে, আমাদের এখন যাওয়াই দরকার তাই বলছি । —হোয়াট হাজ হল র্যাডিশ টু ডু উইথ ইট ? —বাংলা ইডিয়ম—ওর মানে মূলো খেতে যেমন ঝাল, অথচ দেখতে রাঙা তেমনি এ জায়গা যতই ভাল হোক—মানে—এই গিয়ে— o আমি নবীনদার সাহায্যে অগ্রসর হইয়া বলিলাম--ঠাও লাগতে পারে তাই তাড়াতাডি যাওয়া উচিত—বাংলা ইডিয়ম। মূলে হাসিতে লাগিল। বলিল—ফনি, দ্যাট র্যাডিশ ইজ অলওয়েজ মিক্সড উইথ ইওর বেঙ্গলি ইডিয়ম্স্। খিনৃসি হ্রদের পাহাড় হইতে নামিয়া রিজার্ভ ফরেস্টের কুসুমাস্তৃত পথে আমরা রামটেক পাহাড়ের তলদেশে পৌছিলাম। নবীনদার আদেশে ড্রাইভাব নাগপুরের রাস্তা ছাড়িয়া বস্ত আতাবৃক্ষ শোভিত রামটেক পাহাডের ঘোরানো পথ ধরিল। মুলোর এ জিনিসটা মনঃপূত হইল না । সে দু একবার মৃদ্ধ প্রতিবাদও করিল, বিশেষ কোনও ফল হইল না। আসল কথাটা আমরা জানিতাম। মিস সোরাবজি নামে একটি পার্শী তরুণীর সঙ্গে মূলো ভাব জমাইবার ব্যর্থ চেষ্টা করিতেছে আজ মাস ছ সাত ধরিয়া। মেয়েটির বাবা নাগপুরের ডাক্তার, তাহাদের বাড়ী সন্ধ্যাবেলাটা কাটানো মূলোর অনেক দিনের অভ্যাস, যদিও মেয়ের বাপ-মা তাহা যে খুব পছন্দ করে তাহ নয়। মূলোর মুখে শুনিয়াই বুঝিয়াছি তাহারা মূলোকে এমন ইঙ্গিতও করিয়াছেন যে, এত ঘন ঘন সে যেন তাহদের বাড়ী না আসে। কিন্তু মূলোর বুদ্ধি ও বিবেচনাশক্তির স্কুল আবরণ র্তাহারা ভেদ করিতে সমর্থ হন নাই । পাহাড়ের নীচে গাড়ী রাখিয়া আমরা সিড়ি বাহিয়া উপরিস্থিত রামসীতার মন্দিরে উঠিতেছি। & মুলো বলিল,—মিঃ রায়, একদিন মিস সোরাবজি বলেছিল রামটেকের মন্দির দেখবে, বড় ভাল হোত যদি আজ আনতাম । নবীনদী আমার গা টিপিলেন। আমার হাসি পাইতেছিল, অতি কষ্ট্রে চাপিলাম। পাথরে বাধানে অনেকগুলি সিড়ি ভাঙিয়া উপরে উঠিলাম। সিড়ির দু ধারে অসংখ্য বন্ত আতা, পড়াসি ও তিন্দুক গাছের নিবিড় বন । ডান দিকে অনাবৃত পৰ্ব্বতগাত্র হেলিয়া থাকিয়া দৈত্যপুরীর মাইলস্টোনের মত দেখাইতেছে। সন্ধ্যার ধূসর ছায়ামাখা নিস্তব্ধতার মধ্যে পেশোয়াদের নির্মিত এই শৈলমন্দির দুর্গটি ভারতের অতীত গৌরবের বার্তা বহন করিয়া আনিয়া দিতেছিল আমাদের কানে কানে। শুধুলে গাম্ভীৰ্য্যময় নিন্তব্ধতার তপোভঙ্গ হইতেছিল মূলোর অসম্ভব বকুনি দ্বারা। উপরে উঠিয়া আমরা বিগ্রহ দর্শন করিলাম। সামাঙ্ক কিছু প্রপাদ ও চরণাক্ত পাইলাম। উচু পাহাড়ের উপর মন্দির, অনেক নীচে একদিকে রামটেকের বাজার।