পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার \め〉 দেখিলাম মূলোর চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিল একটা ছবি—কয়েক শত বৎসর পূৰ্ব্বের রাজপুতানায় বিশাল মরুভূমির মধ্যে উটের পিঠে চড়িয়া ইহার সেই বীর পূর্বপুরুষ চলিয়াছে জয়সিংহের সৈন্যদলের সহিত দেওধার যুদ্ধে, সেলিমগড়ের যুদ্ধে—চওড়া গালপাটাওয়ালা রুক্ষs দর্শন মুখাবয়ব, দীর্ঘ দেহ, পাশে খোলা দীর্ঘ দুধার তলোয়াব, হাতে সাত হাত লম্বা বন্দুক— মৃদুতা নাই, ভয় নাই—কবাটের মত বিশাল বক্ষে জলন্ত দুঃসাহস—কাহার সাধ্য ছিল তাহার মনোনীত কন্যাকে স্পর্শ করে । সে ছিনাইয়া আনিত তাহার প্রণয়িনীকে যে কোন লোকের হাত হইতে । লড়িত, খুন করিত। আধুনিক যুগের আবহাওয়ায় জয়সিংহের সৈন্যদলের সেই বীর নায়কের বংশধর এই সাহেবী পোশাক পরা, নিখুঁত টাই বাধা, ঘাড় চাচ, ক্লিন শেভড, হাতে রিস্টওয়াচ বাধা ছোকরা নিতান্ত নিরুপায় । কবিতা লেখা বা চোখের জল ফেলা ছাড। সে হারানো প্রণয়িনীর জন্য কি করিতে পারে ? বিশেষত যখন দুইবার ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী না পাইয়া সে আরও দমিয়া গিয়াছে। D ছোকরার জন্য এই সৰ্ব্বপ্রথম দুঃখ হইল । স্থলোচনার কাহিনী X সন্ধ্যা হইয়াছে, মুকিয়া স্ট্রীট দিয়া যাইতেছি। ডাক্তারখানা খুলিতে দেরি হইয়া গিয়াছে, সময় হইয়া আসিল, সুতরাং হন হন করিয়াই চুলিয়াছি—এমন সময়ে বাড়ীঘরের থামের ছায়ার আলো-আঁধারির মধ্যে একটি স্ত্রীলোককে দেখিয়াই আমি থমকিয় দাড়াইয়া গেলাম । এ যেন সেই সুলোচনার মা না ? অবিকল সেই রকম দেখিতে, যদিও বহুকাল দেখি নাই । কিন্তু তাও কি সম্ভব ? এতকাল পরে মুলোচনার মা বাচিয়া থাকিবে এবং কলিকাতা শহরেই থাকিবে ? 矚 একটু জোরগলায় ডাক দিলাম—শুনছেন? শুনছেন ? বলি শুনছেন—এই যে ! যে বৃদ্ধাটি ফিরিয়া দাড়াইল আমার ডাক শুনিয়া এবং হয়তো বা তাহাকেই কেহ ডাকিতেছে মনে করিয়া—বিস্ময়ের সহিত দেখিলাম সে সুলোচনার মা-ই বটে। 蠍 মুলোচনার মা কাছে আসিল। প্রথমে চিনিতে পারিল না, পরে পরিচয় দিতেই দন্তহীন মুখে এক গাল হাসিয়া বলিল—ও-তুমি যদু ! আহা কতকাল দেখিনি তোমাদের । —ইত্যাদি বা ঐ ধরনের কোন উক্তি। আমার চক্ষুর সম্মুখ হইতে ছাব্বিশ-সাতাশ বছরের যবনিক হঠাৎ সরিয়া গেল। গত মহাযুদ্ধেরও কয়েক বৎসর পূর্কের কলিকাতা-ঘোড়ার ট্রাম সবে মাত্র বন্ধ হইয়াছে তখনকার আমলের অতি সুন্দরী আধুনিকাদের মধ্যে যে আমার চোখে সৰ্ব্বপ্রধান স্বনী এবং সবচেয়ে