পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԵr বিভূতি-রচনাবলী যতীন বাড়ী ফিরে এসে দেখলে একটি মহিলা তার জন্যে অপেক্ষা করচেন। প্রথমে দূর থেকে তার মনে হোল একে কোথায় সে দেখেচে–কিন্তু মহিলাটি যখন ছুটে এসে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন, তখন তার চমক ভাঙলো । —বাবা মন্ট, বাবা আমার! আমার মানিক !” —ম, তুমি ? - যতীন মায়ের পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলে। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে সে অবাক হয়ে গেল। বাহান্ন বছর বয়সে তার মায়ের মৃত্যু হয়,কিন্তু এখন তার মুখে বার্ধক্যের চিহ্নমাত্র নেই। তাই বোধহয় সে মাকে চিনতে পারেনি প্রথমটা । *

  • —বাবা কোথায় মা ?

যতীন কথা শেষ করে ঘরের দোরের দিকে চাইতেই বাবাকে দেখতে পেলে । পঞ্চাশ বছর বয়সে যতীনের বাবা মারা গিয়েছিলেন—এ চেহারা তত বয়সের নয়। এ দেশে প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ লোক নেই ? যতীন বাবাকে প্রণাম করতেই তিনি এগিয়ে এসে ওকে আশীর্বাদ করলেন । বল্পেন—তোমার এখনও আসবার বয়েস হয়নি বাবা, আর কিছুদিন থাকলে বিষয়সম্পত্তিগুলোর একটা গতি করতে পারতে । মাখন রায়ের জমিটা কত শখ করে খরিদ করেছিলাম কাছারীর নীলেমে, সেটা রাখতে পারলে না বাবা ? আর বেচ লে বেচলে ওই শশধর চক্কত্তি ছাড়া আর কি লোক পেলে না ? to যতীনের মা বল্লেন—আহা বাছ এল পৃথিবী থেকে এত কষ্ট পেয়ে, তোমার এখন সময় হোল পোড়া বিষয়ের কথা নিয়ে ওকে বকৃতে ? কি হবে বিষয় এখানে ? কি কাজে লাগবে মাখন রায়ের জমি এখানে আমায় বুঝিয়ে বলো তো শুনি ? যতীনের বাবা বল্লেন—তুমি মেয়েমানুষ, বিষয়ের এক বোঝ ? তুমি সব কথার ওপর কথা বলতে আসো কেন ? মাখন রায়ের জমা— পুষ্প ঘরে ঢুকতে যতীনের বাবা কথা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলেন। যতীনের মা বল্লেন— পুষ্পকে চিনতে পেরেছিলি তো মণ্ট ? যতীন বল্লে—খুব । —ওর মত তোকে ভালবাসতে আর কাউকে দেখলুম না। এই আঠারো-উনিশ বছর ও এখানে এসেচে, এই বাড়ীঘর সাজিয়ে তৈরী করে তোরই অপেক্ষায় বসে আছে। পুষ্প তোকে এনেচে বলেই তৃতীয় স্তরে আসতে পেরেচিস, নইলে হ্লোত না। আর উনি এখনও দ্বিতীয় স্তরে পড়ে রইলেন। বিষয়-সম্পত্তিই ওঁর কাল হয়েচে । এসেচেন আজ ষোল বছর, বিষয়ের কথা ভুলতে পারলেন না, সেই ভাবনা সর্বদা। এত করে বোঝাই, -এত ভাল কথা বলি, ওঁর চোখ সেই পৃথিবীর জমিজমার দিকে। কাজেই ওপরে উঠতে পারচেন না কিছুতেই— যতীনের মা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে খানিকটা চুপ করে রইলেন। তারপর মেহের দৃষ্টিতে পুষ্পের দিকে চেয়ে বল্লেন, উন্নতি করেচে আমার পুপ মা । এ রকম কেউ পারে না। এত অল্প দিনে ও যেখানে আছে এখানে আসা যায় না। ওর পবিত্র একনিষ্ঠ ভালবাসা এখানে এনেচে ওকে।