পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার «ዓ উঠান ঢাকিয় গেল। আমার স্ত্রী বলিলেন—ওগো, কলকাতায় সবাই ফিরছে, চল আমরাও যাই—এখানে আর থাকা যায় না। মরি, সেখানে বোমা খেয়ে মরব। ভিজে কাঠে উজুন ধরিয়ে আর ফু পেড়ে চোখ কানা হয়ে যাবার যোগাড় হয়েছে, এ আর সহ হয় না। অতএব চলিয়া আসিলাম কলিকাতায় । আশ্বিন মাসের প্রথমে এই সেদিন ভগ্নীপতির অমুখ উপলক্ষে একবার সেই গ্রামে গিয়াছিলাম। স্টেশনে নামিয়াই সেদিন ভীষণ বর্ষা । অতি কষ্টে সাত মাইল হাটিয়া প্রায় সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে গ্রামের মাঠে পৌছিলাম। তখনও সমানে বৃষ্টি পড়িতেছে, চারিধার ধোয়৷ ধোয় । হঠাৎ চাহিয়া দেখি সেই দুৰ্য্যোগের মধ্যে সুরেশ এক বোঝা কাচা ঘাস মাথায় করিয়া কোথা হইতে আসিতেছে। আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিলাম—সুরেশ যে ! এত বাদলায়— সুরেশ আমাকে দেখিয়া একটু অপ্রতিভ হইয়াছে তাহার ধরন দেখিয়া বুঝিলাম । কতকটা কৈফিয়তের সুরে বলিল—এই বাদলায় গরুর খাবার নেই কিছু একেবারে । খুালপারের মাঠ থেকে •ছু বোঝা কাচা ঘাস...আমি বলি, যাই নিয়ে আসি, দিদি বারণ করেছিল । সাহস দিয়া বলিলাম—বেশ তো, ভালই তো । নিজের কাজ নিজে করবে এর মধ্যে কিছু “খুব ভাল । ছোকরার এতটা অভ্যাস নাই, দেখিলাম তাহার রীতিমত কষ্ট হইতেছে। ভগ্নীপতির অন্নদাস, না করিয়া উপায়ই বা কি। রামু মুখুজ্যে বসিয়া খাইতে দিবে না। ছোকরা বলিল—কলকাতার অবস্থা কেমন ? —এখন ঢের ভাল। আবার যেমন তেমনিই হয়েছে। —যুদ্ধের খবর কি ? একথানা খবরের কাগজ আসে না যে পড়ি। —ঐ এক রকম চলছে। • —তাহলে এবার কলকাতায় গিয়ে একটা কাজে লেগে যাই, কি বলেন ? বোমার হাঙ্গামা যখন অনেকটা মিটেছে চাকরি একটা জুটিয়ে নেবই । আর্মি অ্যাও নেভি স্টোর্সের গ্রিফিথ সাহেব আমায় বললে—ইউ আর দি সন অব এ নোেবল ফ্যামিলি, গাঙ্গুলি। আই উইল সি ইউ —সেবার আমার নিয়ে গিয়েছিল সেখানে—ওই যে কুণ্ডু য়্যাও সন্স, তাদের মেজ'ছেলে কণ্টাক্টর কিনা ওখানকার, তাই। একেবারে স্পষ্ট বললে, আই উইল সি ইউ— তাহাকে মনে করিয়া দিলাম না যে, সে বোমার ভয়ে কলিকাতা হইতে পলাইয়া আসে নাই, আসিয়াছে তাহার তিন বৎসর পূৰ্ব্বে। চাকরি এতদিন করে নাই কেন ? ছোকরা এখনও স্বপ্নরাজ্যেই বাস করিতেছে—কিছুতেই সে রূঢ় বৰ্ত্তমানকে স্বীকার করিতে চায় না --আমি তার স্বপ্ন ভাঙিয়া দিব কেন ? তবুও কি জানি ছোকরার উপর কেমন সহানুভূতি ও করুণা হইল। বেচারী !