পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も*8 বিভূতি-রচনাবলী —পাবে না আমি জানি । আমার জিনিসে তোমাদের কোন মায়া নেই। যেদিন নিরুপমা (প্রথম পক্ষের স্ত্রী) গিয়েছে, সেদিনই সব গিয়েছে । তোমার বাক্সে অতগুলো টাকা রইল ; কাপড় আছে, সায়া-সেমিজ, পাউডারের কোটাে ঠিকই রইল—তোয়ালে বাধা টাকাটাই গেল চুরি । সদ্য টাইফয়েড থেকে উঠেছে বিমলা । তার অধিকাংশ কথাই মনে থাকে না । তেরঙ্গের মধ্যে তার জামাকাপড় সাবান এসেন্স ছিল সবই সত্যি বটে, কিন্তু সে ভেবে দেখলে গত তিন মাসের মধ্যে সে রোগশয্যায় পড়ে ছিল মাস দুই—মরণের দ্বার থেকে ফিরে এসেছে তাও সে জানে। স্বামীই সৰ্ব্বদা শিয়রে বলে পাথার বাতাস করে, মাথায় ঘটি ঘটি জল ঢেলে, কত রকমে সেবা শুশষ করে তাকে বাচিয়ে তুলেছে— একথা তার ভাসা-ভাস মনে আছে। অমুখ সেরে উঠে আজ দিন কুডি সে বাপের বাড়ী এসেছে—সেই তোরঙ্গটাও এখানে এসেছে সঙ্গে । অমুখের আগে একদিন অতুল খাজনা আদায় করে অনেকগুলো টাকা আনে। বিমলা বায়না ধরলে—ওগো, কিছু টাকা আমায় দাও—দিতেই হবে—ছাড়ব না কিছুতেই। অতুল দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর অন্যায় আবদারে একটু বিরক্ত না হয়ে পারলে না। সংসারখরচের টাকা, জমাবার মত বেশি টাকা যদি থাকত তবে সে কথা স্বতন্ত্র। তা যখন নেই অত বড মেয়ের বোঝা উচিত। কিন্তু স্ত্রী বায়না ধরলে ছেলেমানুষের মত-এ টাকাগুলো আমি আমার বাক্সে তুলে রাখব—দাও আমাকে, ওগো ? অতুল পাঁচটি টাকা অন্ত খরচের জন্ত রেখে বাকি টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দিল । অতুলেরই একটা আধ ময়লা কমালে বিমলা টাকাগুলো বেঁধে তাকে ছোলার কলসীর মধ্যে রেখে দিল । রাত্রে অতুল বললে—টাকা কোথায় রেখেছ ? —তাকে, ছোলার কলসীর মধ্যে । .—থাক, ভাল জায়গা। কেউ টের পাবে না । এর কিছুদিন পরে বিমলা পড়ল শক্ত টাইফয়েডে। দুদিন পাচদিন করে যখন আঠার দিন কেটে গেল—তখন বাড়ীর ঝি একদিন বিমলার ভাগ্নীকে বললে—দিদিমণি, ছোলাগুলো রোদরে দেব? বর্ষাকাল, নষ্ট হয়ে যাবে একেবারে। বিমলার এই ভাগ্নী তার মামার সংসারেই থাকত। অবিবাহিত, তের-চৌদ্দ বছর বয়েস । সে ছেলেমানুষ, কিছুই জানে না টাকার খবর। তার সম্মতি পেয়ে ঝি ছোলার কলসী চাক থেকে পেড়ে ছোলা ঢালতে গিয়ে কুমালে-বাধা কি একটা দেখতে পেলে । প্রথমে সে বুঝতে পারে নি জিনিসটা কি। হাতে নিয়ে নাড়াচুড়া করে যখন বুঝলে এতে পয়সাকড়ি বাধা, ততক্ষণ বিমলার ভাগ্নী জয়ন্তী সেখানে চুলের দড়ি রোদে দিতে এলে দাড়িয়েছে। • জয়ন্তী বললে—কি গো ওটা ?