পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

さbr বিভূতি-রচনাবলী সামনে ঐ রকম কিউব দিয়ে সাজানো ঘর আর একটি তৈরী হয় – সেটা অতি কষ্টে পার হয়, তো আর একটা । দ্বিতীয় স্তরের অপেক্ষাকৃত স্থূল অথচ অত্যন্ত নমনীয় বস্তুপুঞ্জের ওপর ওর নিজের চিন্তাশক্তি কায ক’রে আপন:-আপনিই এই রকম কিউব সাজানো দেওয়ালের বেড়াজাল স্বষ্টি হচ্ছিল--চিন্তার সংযম বা পবিত্রতা অভ্যাস না করলে এই সব নিম্নস্তরে যে ও রকম হয় তা যতীনের জান ছিল না—যতীন যত ভয় পায়, ততই তার মনের বল কমে যায়—ততই সে নিজের স্থষ্টি কিউবরাশির মধ্যে নিজেই বন্দী হয় । জনৈক উচ্চস্তরের পথিক-আত্মা তাকে সে বিপদ থেকে মেদিন উদ্ধার করেন। সেই থেকে এক পৃথিবীতে আসতে ওর ভরসা হয় না । আজও বসে ভাবতে ভাবতে আশার জন্তে সহানুভূতি ও দুঃখে ওর মন পূর্ণ হয়ে গেল । কিন্তু কি করবার আছে তার, অশরীরী অবস্থায় আশার কোনো উপায়ই সে করতে পারে না--অন্তত করবার উপায় তার জানা নেই । হঠাৎ তার প্রবল আগ্রহ হোল আর একবার সে আশার কাছে যাবার চেষ্টা করবে । এলোমেলো চিন্তা মন থেকে সে দূর করবে- ভেবে ভেবে চণ্ডীর একটা শ্লোক তার মনে পড়লো--- যা দেবী সর্বভুতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিত নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমোনমঃ । এই শ্লোকটা একমনে আবৃত্তি করতে করতে সে ইচ্ছা করলে যে পৃথিবীতে যাবে--আশাদের বাড়ীতে—আশার কাছে। পৰ্ব্বক্ষণেই সে অনুভব করলে সে মহাশূন্তে মহাবেগে কোথায় নীত হচ্চে, গতির বেগে তার শরীরে শিহরণ এনে দিলে, মন মাঝে মাঝে অন্যদিকে যায়, আবার ফিরিয়ে এনে জোর করে চণ্ডীর শ্লোকের প্রতি নিবদ্ধ করে । এই তো তার শ্বশুরবাড়ীর পুকুর । ঐ তো সামনেই বাড়ী । বড় মজার ব্যাপার । এটা এখনও যতীন বুঝতে পারে না, কি করে সে চিন্তা করা মাত্রেই ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছে গেল । এরোপ্লেন যারা চালায়, তাদের তো দিকৃভুল হয়, কত বিপাকে বেধোরে কষ্ট পায় - কিন্তু কি নিয়ম আছে এ জগতে যে, জনৈক অজ্ঞ আত্ম শুধু মাত্র চিন্তা দ্বারা গন্তব্য স্থানে এসে পৌছয় । রাত্রি.আশা দোতলার ঘরে ঘুচ্চে, ও গিয়ে তার শিয়রে বসলে । খানিকটা পরে দেখলে আশার দেহের মধ্যে দিয়ে ঠিক আশার মত আর একটি মূর্তি বার হচ্চে। যতীন শুনেছিল গভীর নিদ্রার সময় মামুষের স্বহ্মদেহ তার স্থূলদেহ থেকে সাময়িক ভাবে বার হয়ে ভুবর্লোকে বিচরণ করে। কিন্তু আশার এই হুক্ষদেহ দেখে যতীন বিশ্বত ও ব্যথিত হয়ে গেল। কি জ্যোতি-হীন, শ্রীহীন, অপ্রীতিকর মেটে সি দুরের মত লাল রঙের দেহটা ! চোখ অর্ধনিৰ্মীলিত, ভাবলেশহীন, বুদ্ধিলেশহীন...একটু পরে সে.দেহের চক্ষুদুটির দৃষ্টি যতীনের দিকে স্থাপিত হোল –কিন্তু সে দৃষ্টিতে এমন কোনো লক্ষণ নেই, যাতে যতীন বুঝতে পারে যে আশা ওকে চিনেচে বা ওর অস্তিত্ব সম্বন্ধে ও সচেতন হয়েচে । যেন মুমু লোকের চোখের চাউনি— যা কিছু বোঝে কিছু বোঝে না, চেয়ে থাকে অথচ দেখে না। যতীন ভুবর্লোকের অল্পদিন-সঞ্জাত সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারলে, আশার স্বৰ্ম্মদেহ অত্যন্ত অপরিণত এবং আদেী উচ্চতর স্তরের উপযুক্ত নয়। সে জিজ্ঞেস করলে—আশা, কেমন আছ ? আমায় চিনতে পারো ?