পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も2bア বিভূতি-রচনাবলী অশরীরী রহস্যময় মোহিনী সঙ্গীতলহরী কখনও উচ্চে, কখনও মৃদুস্বরে একটানা বয়ে চলেচে--- বিরাম নেই...বিরতি নেই, পৃথিবীর কোনো ভাষাতেই তার বর্ণনা নেই “কতক্ষণ সময় কেটে গেল তার লেখাজোখ নেই—অনন্তকাল ধরে অমন সঙ্গীতপ্রবাহিণী গোমুখী-নির্গত ভাগীরথীধারার মত বয়ে চলেচে.চলেচে । যতীনের মনের কোন গুপ্ত কক্ষের গভীর অনুভূতির দ্বার খুলে গেল। সে দেখতে পেলে তার পৃথিবীতে যাপিত আরও অনেক পূর্ব জীবন---এই অনন্ত জীবনপ্রবাহে সে যুগযুগান্তর ধরে ভাবের ও প্রেমের স্রোতে বয়ে আসচে.--আশা কি এক জন্মের আশা, না পুষ্প এক জন্মের পুপ ? কত যুগ ধরে ওরা যে ওর নিত্যসঙ্গিনী, ওর জীবনে ছনে গাথা ওদের জীবন–কতবার কত বিরহ-মিলন হাসি-অশ্রুর মধ্যে দিয়ে ওদের সঙ্গে কতবার দেখাশোনা, কতবার আবার ছাড়াছাড়ি–কত বিস্মৃত মরুদ্বীপ, কত শু্যামল পল্লীর কুঞ্জে কুঞ্জে, কত ক্ষুদ্র গ্রাম্য নদীর তীরের কুটীরে, কত পাহাডের নীচেকার অদিম কালের গুহায় ••কত রাজার রাজপ্রাসাদে...কত দশার্ণ গ্রামে ব্যাধরূপে, কত শারদ্বীপে ক্ৰৌঞ্চমিথুন রূপে, কত কুরুক্ষেত্রে বেদগায়ক ব্রাহ্মণরূপে ••• যতীন দেখলে পুষ্প কাদচে.ও নারবে পুষ্পের হাতে হাত দিয়ে তাকে নিজের কাছে সস্নেহে নিয়ে এল-•• তারপর কখন সে অপূর্ব সঙ্গীত থেমে গিয়েচে, বিচিত্ররূপী জ্যোতির্ময় জীবের মহাশূন্যে অদৃত হয়ে গিয়েচেন.কখন জ্যোৎস্নার আলোতে সারা দেশ ভরে গিয়েচে যতীনের খেয়াল নেই.--জ্যোৎস্না, জ্যোৎস্ন। বহু পূর্ণিমার সম্মিলিত জ্যোৎস্নালোক চারিদিকে. যতীন বল্লে—পুপ, চল ওঠে । ندارد ওরা কিছু দূরে মাত্র এসেচে এক জায়গায় দেখলে মাটির বুকে যেন চাদ খসে পড়েচে । দুজনে কাছে গিয়ে দেখলে, পরমরূপসী এক দেবী ঘাসের ওপর বসে হাপুস নয়নে কাদচেন । ওরা অবাক হয়ে গেল । এত উচ্চস্তরের দেবীর দুঃখ কিসের ? যতীন জিজ্ঞেস করলে—ম, আপনার কোনো সাহায্য করতে পারি ? দেবী ওদের দিকে চাইলেন। যতীনের মনে হোল দেবী কি সাধে হয় ? এত রূপ এত জ্যোতি এত মহিমা—অথচ কি মমতা, করুণ, দীনতায় ভরা দৃষ্টি ! বল্লেন—পারবে ? 會 দুজনেই বলে উঠলো—হুকুম করুন, আপনার আশীর্বাদে পীরবে । দেবী বল্লেন—কল্পপৰ্বত থেকে ফিরচো ? তোমরা কোথায় থাকে৷ ? - আজ্ঞে হ্যা । আমরা এর নীচের স্বর্গে থাকি, তৃতীয় স্তরে । —কি মধুর সঙ্গীত ! শুনলে ? যতীন বল্লে—শুনলাম, মা ! আমি বেশীদিন পৃথিবী ছেড়ে আসিনি। এই ব্যাপারটা কি