পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e বিভূতি-রচনাবলী ون এসেচে“এই তার বহুপরিচিত স্বদেশ-যুগ-যুগাস্ত, কত মহাযুগ ধরে সে এখানে আবার ফেরবার অপেক্ষায় ছিল। মহাবোমে আর কেউ নেই, আশালতা না, পুষ্প না, তার যতীনও না, সন্ন্যাসী না, তাদের এ লোকে ঝুঁধা কত সাধের ঘর বা বুড়োশিবতলার ঘাট না, দেব না, দেবী না পরলোক না, এমন কি ঈশ্বরও না--- মহাব্যোমের মহাশূন্যে অনাদি, অনন্ত, স্বয়স্থ, স্বপ্রকাশ, নির্বিকার, নিবিকল্প সে শুধু আছে— পাপহীন, পুণ্যহীন, মঙ্গলহান, অমঙ্গলহীন, স্থখহীন, দুঃখহীন সর্বপ্রকার উপাধিহীন••• সে-ই আছে মাত্র একা । নিঃসঙ্গ মহাব্যোমে আর কোথাও কিছু নেই, কেউ নেই । সে-ই সব। এমন কি, এ মঙ্গাব্যোমও তার স্বষ্টি - স্বষ্টি নয়-- সে নিজেই । যতীন আর কিছু জানে না। যখন ওর চৈতন্য হোল তখন সে দেখলে সেই মহাসন্ন্যাসী পাশেই বুড়োশিবতলার ঘাটের রাণাতে বসে আছেন-—সে তার এপাশে বসে। যেন সে ঘুম ভেঙে উঠেচে এইমাত্র । সন্ন্যাসী হেসে বলেন--কি হোল ? দেখলে ? যতীন মূঢ় ও অভিভূতের মত তার মুখের দিকে চেয়ে বল্লে—কি দেখলাম বলুন দিকি ? —আমি চললাম। যা দেখলে, দেখলে । মুখে কি বোঝাবো ? মন নিম্নস্তরের ইন্দ্রিয় মাত্র, ওর চেয়ে বড় অনুভূতির দরজা যেদিন খুলবে, সেদিন আমায় বোঝাতে হবে না, নিজেই বুঝবে । তোমার সে অবস্থার এখনও বহু বিলম্ব । দু-চার জন্মে হবে না। অনেকবার এখনও পৃথিবীতে যাতায়াত করতে হবে। . . - তিনি যাবার উদ্যোগ করচেন দেখে যতীন ব্যাকুলভাবে বল্পে—প্রভু, যাবেন না, যাবেন না । পুষ্প বলে একটি মেয়ে আছে, তাকে একবার দেখা দিয়ে যাবেন দয়া করে ? সন্ন্যাসী হেসে বল্লেন—সময় হোলে দুজনেই দেখা পাবে আবার । তবে স্ত্রীলোকের পথ ভক্তির, জ্ঞানের নয়। আমি তোমাদের দুজনকেই জানি, গত তিন জন্ম তোমরা আমার দেখা পেয়েচ, তোমাদের ভালবাসি। কিন্তু তাতে কি হবে ? সময় হয়নি। চক্রপথে ঘুরতে হবে অনেকদিন । আমি আছি তোমাদের পেছনে। নতুবা আমার দেখা পেতে না । সন্ন্যাসী অস্তহিত হোলেন।