পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান צף —গীয়ে থেকেই বা কি করতাম শম্ভুদা। এ বেশ আছি। আমাদের মত মানুষের আবার গা আর অর্গ কি ? কি ছিল জীবনে ? মা মরলে কোথায় দাড়াতাম ? এখানে খারাপ নেই কিছু। ফিরে যখন যেতে পারবে না, তখন সেকথা ভেবে আর কি হবে । — আমি তোকে বোনের মত ভালবাসি আশা, চল তোকে এখাম থেকে নিয়ে অন্য জায়গায় রেখে দেবো । আশা কি একটা জবাব দিতে যাচ্চে এমন সময়ে নেতা এসে হাজির । শস্তুকে ওখানে দেখে সে খুব চটে গেল মনে মনে, তখন কিছু বল্পে না, কিন্তু তারপর আশাকে যথেষ্ট তিরস্কার ও অপমান করলেন তার ধারণা আশাই শস্তুকে লুকিয়ে খবর দয়ে এনেছিল । * যতীন সব দেখলে দাড়িয়ে । আজকাল সে সন্দেহ করে এই নেত্যর জন্যেই আশা শ্বশুরবাড়ী যেতে চাইত না । পুষ্প সব জানে কিন্তু তাকে কখনো কিছু বলেনি। তবুও রাগ হয় না আশার ওপর— গভীর একটা অনুকম্পা, সে দ্বিতীয় স্তরের প্রেত যদি হোত, তবে নেত্যকে একদিন এমন বিভীষিকা দেখাতে যে মরে কাঠ হয়ে যেতো নেতা, কেমন নেত্য সে দেখে নিত । করুণাদেবীর কাছে এইজন্যেই সে গেল পুষ্পকে নিয়ে । একটা ক্ষুদ্র দ্বীপের মত স্থান অসীম বোমসমুদ্রে, চারিদিকে উপবন, কুস্থমিত বহুলত, কিছুদূরে একটা ঝর্ণ পড়চে পাহাড়ের মাথা থেকে । বনানীর বন্য সৌন্দর্য ও উপবনের শোভা এক হয়ে মিলেচে । একটা প্রাচীন বৃক্ষতলে ঝরা পাতার রাশির ওপর দেবী এলিয়ে শুয়ে পড়েচেন । কেউ কোথাও নেই, শূন্ত দ্বীপ, শূন্ত বোমতল। দেবীর অপরূপ রূপে সেই প্রাচীন বনস্থলী উজ্জল হয়ে উঠেচে । যতীন ভাবলে, এই তো স্বর্গ। এত সৌন্দর্য দিয়ে গড়া যে ছবি তা স্বর্গ ছাড়া আর কিছু নয়। পৃথিবীতে এমন বনবনানীর সমাবেশ কই, যদি বা থাকে এমন রূপসী মেয়ে কই, তাও যদি থাকে, এত নির্জনত কই—যদি বা থাকে, এ তিনের অদ্ভুত সমাবেশ কোথায় ? দেবীর মাথায় কি এই তৈরি হয়েচে ? হয়তো তাই । এতটুকু একটা গ্রহ বা উপগ্রহ, শুধু বনবনানীতে ঘের, সেখানে আবার অন্য কেউ নেই উনি ছাড়া, আবার দিব্যি পাখীর ডাকও আছে ! করুণাদেবীর মুখশ্ৰী কি সুন্দর । আর কি সহানুভূতি ও করুণায় ঈষৎ বিষাদমাখা । মাতৃমূর্তির এমন অপূর্ব মহিমময় জীবন্ত আলেখ্য তার সামনে থাকতেও যদি সে ঈশ্বরের দয়ায় কি দেবদেবীতে বিশ্বাস না করে, তবে সে নিতান্ত নির্বোধ। শুধু পুষ্পের জন্যই সে এখানে আশতে পারচে বা দেবীকে পাচ্চে—নইলে ওঁর দর্শন পাওয়া তার পক্ষে কি সহজ হোত ? যতীনের বক্তব্য পুপই বল্লে—আশাবোঁদি কলকাতার বাসাবাড়ীতে কাল রাত্রে মার পর্যন্ত খেয়েচে--সারারাত কেঁদেচে, যতীনের মনে বড় কষ্ট। এই আকর্ষণ তাকে সর্বদা পৃথিবীতে টানচে, এখন কি করা যায় ? ' করুণাদেবী সব শুনে বল্লেন---এতে কিছু করবার নেই । কন্যা যতদিন ঠেকে না শিখবে, তার জান হবে না | যতীন ভাবলে—এ কি কথা হোল! এত বড় দেবীর মুখে এ কি সাধারণ,পৃথিবীর মানুষের মত কথাবার্তা ! এ কথা তো পৃথিবীতে যে কোন জমিদারগিস্ত্রী কি দারোগ ইনস্পেক্টরের বেী