পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ግ® নিবিড় হয়ে ওঠে– অথচ সে অদৃশ্ব যোগের বার্তা পৃথিবীর মানুষে জানেও না, বিশ্বাসও করে না । কোকিল ডাকে বৈশাখের অপরাহে, ছায়াভর মাঠে, নদীতীরে । সে স্বরের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর বনঝোপ যুক্ত হয় সুরলোকের আনন্দবাণার ঝঙ্কারের সঙ্গে । কে জানে সে কথা । —আর একটি দেখবে ? এদিকে চেয়ে দেখ– পুপ কিন্তু সে দেশ চিনতে পারলে না। খুব ফর্স মেয়েটি, বয়স নিতান্ত কম নয়—দেখেই বোধ হয় আধ্যাত্মিক উন্নত অবস্থার মেয়ে। একটা পুরোনো সোফায় বসে বসে কি পরিষ্কার করচে। জিনিসটা পুপ কখনো দেখেনি, বুঝতে পারলে না । দেবী বল্পেন— গুর স্বামী ছিল শিকারী, কার্পেথিয়ান পর্বতে শিকার করতে গিয়ে বুনো শূওরের হাতে মারা পড়ে । সে আজ সতেরো-আঠারো বছরের কথা—স্বামীর তামাক খাবার নলটা যত্ন করে রোজ পরিষ্কার করে, ফুল দিয়ে সাজায় । সুন্দরী ছিল, বিধবা বিবাহ করবার জন্যে কত লোক ঝুকেছিল –কারে দিকে ফিরেও চায় নি । দুঃখ কষ্ট কত পেয়ে আসচে, খেতে পায় না --তবুও স্বামী ধ্যান, স্বামী জ্ঞান । পুষ্প কি ভেবে বল্লে--বিবাহিত স্বামী যদি না হয়, তবে কি আপনাদের দৃষ্টি সেদিকে পডে না ? প্রণয়দেবী হেসে বলেন- পুষ্প ! পুষ্প সলজ্জ ভাবে চোখ নিচু করলে । —আমাদের অবিশ্বাস ক’রো না, ছিঃ—আমি তোমাকে কতদিন থেকে দেখছি জানো, যতদিন তুমি পৃথিবী থেকে প্রথম এখানে এলে। যতীনের সঙ্গে আমিই তোমাকে মিলিয়ে দিয়েচি—নইলে তুমি ওর দেখা পেতে না । প্রেমের আকর্ষণ না থাকলে পৃথিবী ছেড়ে এসে সকলের সঙ্গে দেখা নাও হতে পারে । —এমন হয় ? —কেন হবে না ? সেই তো বেশি হয়। একটি মেয়েকে জানি, সে পৃথিবী থেকে এসেচে আজ তিনশো বছর । তার স্বামী এসেচে তার আসবার পচিশ বছর পরেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি আজও –এই তিনশো বছর । কারণ প্রেম নেই । প্রেম না থাকলে আমরা মিলিয়ে দিই না । তাতে পরস্পরের আত্মার ক্ষতি বই লাভ হবে না কিছু । পুষ্প বিস্মিত হয়ে বল্পে-উঃ! তিনশো বছর স্বামী-স্ত্রীর দেখা হয় নি ? দেবী বল্পেন—মানে, আর হরেও না। তারা কেউ নয় পরম্পরের। এতে বিস্মিত হবার কিছুই নেই। সত্যিকার প্রেম দুটি আত্মাকে পরস্পর সংযুক্ত করে। যে-প্রেম যত কামনাবাসনাশূন্ত সে প্রেম তত উচু। এই ধরনের প্রেমের জন্যই আমাদের কত খাটুনি । পুপ ফিরে এসে দেখলে যতীন নেই, আবার পৃথিবীতে চলে গিয়েচে আশার কাছে । পুষ্পের মনে কেমন একটা ব্যথা জাগলো—এত করেও যতীনদ আপনার হোল না ! পরক্ষণেই