পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o বিভূতি-রচনাবলী سb —কেন বল তো ? কি আপত্তি তোমার ? —এ তো স্বর্গ। ভগবানের সাক্ষাৎ এখানে পাওয়া যাবে। কাঠ পাথরের মূর্তি পৃথিবীতে দরকার হতে পারে, এখানে কেন ? বৈষ্ণব ভক্তটি হেসে বলেন-ভগবানের সাক্ষাৎ তুমি যেভাবে বলচো ওভাবে পাওয়া যায় কিনা জানিনে। আমি পৃথিবীতে এই বিগ্রহের পূজারী ছিলাম, বড় ভালবাসি ওঁকে, ছেড়ে থাকতে পারনে –তাই এখানে এসে এই মন্দির স্থাপন করে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেচি, ওঁরই সেবাআরাধনায় দিন কাটে বড় আনন্দে । মন্দির আর বাগান সবই মানসী কল্পনায় স্থষ্টি করেচি, এ স্বর্গে তা করা যায় তা নিশ্চয়ই জানো । * —আজ্ঞে হঁ্য, তা এর নিচের স্বর্গেও দেখেচি । —আমার দেবতা শুধু পাথরের নয়, জীবন্তও বটে। কিন্তু তোমাকে তো দেখাতে পারবো না । আমার মা দেখতে পারেন । দেখেচেনও একবার । পুষ্প আবদারের স্বরে বল্লে—আপনি দয়া করলে ইনিও দেখতে পারুেন, বাবা । সাধু হেসে বল্লেন-ইনি দেখতে পারেন না । ইনি ভাবেন, ভগবানকে নিয়ে আমি এভাবে পুতুলখেলা করচি। বালগোপাল বড় লাজুক, এর সামনে বার হবেন না। যে তাকে মন অর্পণ করে ভাল না বেসেচে, বিশ্বাস না করেচে—তিনি যেচে অপমান কুডুতে যাবেন সেখানে ? ভগবান যখন ইষ্টদেবের বেশে লীলা করেন কৃষ্ণ সেজে, কালী সেজে,—তখন তিনি মানুষের বা দেবদেবীদের মনোভাব—যেমন রাগ, লজ্জা, মান, অভিমান, এমন কি ভয় পর্যস্ত পান ! এই তো লীলা-এরই নাম লীলা । বিরাট ঐশী শক্তি যা বিশ্বচরাচর নিয়ন্ত্রণ করচে, তাকে কে ভালবাসতে পারে আপনার ভেবে ? শত শত নক্ষত্র, শত শত সূর্য যার ইঙ্গিতে লয় হয়, যে পলকে স্বষ্টি, পলকে স্থিতি, পলকে প্রলয় করতে পারে—তাকে কে ভক্তি করতে পারে, যদি তিনি— মন্দির থেকে চঞ্চল, মধুর, সজীব কণ্ঠে কে বলে উঠলো—ওখানে বসে বক্‌বক্‌ না করে এথামে এসে আমায় একবার জল খাইয়ে যাও না বাপু ? তেষ্টায় মলুম— সাধু চমকে উঠলেন, পুষ্প ও যতীন চমকে উঠলো। পুষ্প হেসে বল্পে – যান, যান, জল খাইয়ে আস্বন-- যতীন অবাক হয়ে বল্লে—কে ছেলেটি ? সাধু যতীনের মুখের দিকে চেয়ে বল্লেন—বুঝতে পারলে না ? ঐ তো বালগোপাল। তোমার খুব ভাগ্য তোমাকে গলার স্বর শুনিয়ে দিলেন। আমার পুপ মায়ের ভূাগ্য। যাই আমি--- সাধুর মুখে স্নেহ বাৎসলোর রেখা ফুটে উঠলে, তৃষ্ণার্ত সস্তানকে পানীয় জল দেবার ৰাকুলতা নিয়ে তিনি মন্দিরের দিকে অদৃশ্য হোলেন। যতীন ভাবলে, এও পুতুলখেলা, নয় আবার ! পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলে । সাধু অন্তর্যামী, সবার মনের কথা বুঝতে পারেন,