পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

દંશ বিভূতি-রচনাবলী সে রাত্রে মালী আমার দিকেও এলো না । কেন কি জানি। হয়তো পান্না বারণ করে থাকবে। কেবল অনেক রাত্রে পান্না আর আমি যখন গল্প করচি, ওর মালী বাইরে এসে আমাদের কথা শুনতে পেয়ে বললে—ওমা, ই কি অনাছিটি কাও ! এখনো তোমাদের চোখে ঘুষ এলো না ? রাত দুটো বেজেচে ষে ! পান্না চোখ টিপে আমায় চুপ ক’রে থাকতে বললে। দিব্যি গদি-পাত ধপধপে বিছানা, পান্না ওদিকে আমি এদিকে বালিশ ঠেস দিয়ে গন্ন করছি। আমি ওকে যেন আজ নতুন দেখচি৷ একদও চোখের আড়াল করতে পারচি নে। কত প্রশ্ন, কত আলাপ পরস্পরে। এমনি ভাবেই ভোর হয়ে গেল । পান্না উঠে বললে—ফুলশয্যের বাসর শেষ হল। তুমি চা খাবে তো ? মুখ ধুয়ে নাও— আমি চা করি । —করে । আজ মনে আছে ? —হ্যা মনে আছে । —কি বলে। তো ? —আজ তুমি আমায় নিয়ে যাবে। —চ খেয়ে আমি একটু বেরুবো । তুমি তৈরী হয়ে থাকবে। =বেশ । —মাসীকে কিছু বলে না যেন যাওয়ার কথা । বাইরে দেখে এসে তো কেউ নেই, না আছে ? পাৱা মুখ টিপে হেসে বললে—সে আগেই আমি দেখেচি। এখনো কেউ ওঠে নি। তুমি নিশ্চিন্দি থাকে। চ খেয়ে আমি বাড়ীর বার হয়ে একটা পর্কে গিয়ে বসলাম। সারারাত ঘুম হয় নি, খুমে চোখ চুলে পড়েচে, কিন্তু একটা অদ্ভুত আনন্দে মন পরিপূর্ণ। করালী ঠিকানা দিয়েচে, ওকে একটা চিঠি লিখি। ওর দেশেই গিয়ে একটা বাসা নিয়ে প্র্যাকটিস্ করবো। আপাততঃ কলকাতায় একটা ছোটখাটো বাস। দেখে আসা দরকার। পার্কের বেফিতে শুয়ে পড়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম। যখন জেগে উঠলাম তখন বেলা সাড়ে ন’ট। একটা নাপিতকে ডেকে দাড়ি কামিয়ে নিলাম। চায়ের দোকানে আর এক পেয়াল, চ খেলাম। এইবার অবসাদ একটু কেটেচে। তারপর বাস খুঁজতে ৰেৱই। কলকাতায় আমায় কেউ চেনে না । ডাক্তারি পড়বার সময়ে যে মেসে থাকতাম, সেটা কলেজ স্কোয়ার অঞ্চলে। সে মেসে আমাদের সময়কার এখন কেউ নেই—যে যার পাশ করে বেরিয়ে গিয়েচে আট দশ বছর আগে। তাহলেও এই অঞ্চলের অনেক মূী, নাপিত, চায়ের দোকানী আমার চেনে হয়তো। ও অঞ্চলেও গেলাম না বাসা খুঁজতে। এমন জায়গায় যেতে হবে যেখানে আমাকে কেউ চেনে না। কলকাতা শহর জনসমূদ্র বিশেষ,