3 ॐ रै বিভূতি-রচনাবলী
হাজার টাকা করে মাসে কোথা থেকে দেবো ? তবে নতুন বৌয়ের গায়ের তিন হাজার টাকার গয়না আছে, তুমি যদি রাজী হও আজ শেষ রাত্তিরে সব গয়না চুরি করে আনবো। শুনে তো আমি অবাক । মানুষ আবার এমন হয় নাকি ? পুরুষ জাতের ওপর ঘেন্না হয়ে গেল। নতুন বউ, তার গয়না নাকি চুরি করে আনবে বলেচে। আমি সেই যে ফিরে এলাম, আর ওর সঙ্গে দেখা করি নি। বলে, নিজের গলায় নিজে ছুরি দেবে। .আমি মনে মনে বলি, তাই দে ।
—চলে এলে ?
—তার পরের দিনই।
—অত টাকা তোমার হোত ।
—আমন টাকার মাথায় মারি সাত ঝাড় একটা নতুন বেী, ভাল মানুষের মেয়ে, তাকে ঠকিয়ে তার গা খালি করে টাকা রোজগার ? সে লোকটা না হয় ক্ষেপেছে, আমি তো আর তাকে দেখে ক্ষেপি নি ? আমি অমন কাজ করবো ?
পান্নার মুখে একথা শুনে খুব খুশী হোলাম। পান্না যে আবহাওয়ায় মানুষ, যে বংশে ওর জন্ম, তাতে তিন হাজার টাকার লোভ এভাবে ত্যাগ করা কঠিন। ও যদি আমার কাছে মিথ্যে না বলে থাকে তবে নিঃসন্দেহে পান্না উচু দরের জীব ।
বৌবাজারের বাসায় এসে নীলি চলে গেল। বিকেল বেলা ৷ পান্না কলে কাপড় কেচে গা ধুয়ে এল। সত্যি, রূপসী বটে পান্না। সাবান মেখে স্নান করে ভিজে চুলের রাশ পিঠে ফেলে একখানা বেগুনি রংয়ের ছাপাশাড়ী পরে ও যখন ঘরে ঢুকলে, তখন তালকোলার জমিদারের ভাইপো তো কোন ছার, অনেক রাজা মহারাজের মুণ্ডু সে ঘুরিয়ে দিতে পারতো, এ আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। 鲇
পান্না সেই রঙীন রুমালের খুঁট খুলে টাকাগুলো সব মেজেতে পাতলে। বললে—কত টাকা গো ? এই দশ, এই পাচ—
—থাক, গুনচো কেন ?
—তুমি নেবে না ?
—এখন রাখো তোমার কাছে |
—খরচপত্তর তুমিই তো করবে।
—আমার বাক্স নেই। তোমার বাক্সে রাখে ।
—তাহোলে এক কাজ করে । টাকা নিয়ে বাজারে যাও, দু’টো চায়ের ডিসপেয়ালা, ভালো চা, চিনি এ বেলার জন্য কিছু মাছ আলু পটল আনো । মাছের ঝোল ভূত করি। একখানা পা-পোশ কিনে এনে তো ! যত রাজ্যির ধূলো স্বদ্ধ, ঘরে ঢোক তুমি।
—তা আর বলতে হয় না।
—না, হয় না, তুমি জুতো ঘরে নিয়ে ঢুকো না। পা-পোশ একখানা এনে, ওখানে থাকবে। আর ধুনো এনে, সন্দেবেলা খুনো দেবো। .. ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১২২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
