পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఉఆ g বিভূতি-রচনাবলী —দেখতে পাচ্চো না ? চা খাবে তো ? —নিশ্চয়ই। —চা-চিনি নিয়ে এসো। কিছুই নেই। —পয়সা দাও । —নিয়ে যাও আমার এই পাউডারের কোঁটে খুলে। এই যে— পয়সা নিয়ে নেমে গেলুম। দিন কতক বেশ আনন্দেই কেটে গেল । কিন্তু আমার মনে কেমন এক ধরণের অস্বস্তি শুরু হয়েচে, আমার নিজের উপার্জন এক পয়সাও নেই, পান্নার উপার্জনের অর্থ আমাকে হাত পেতে নিতে হচ্চে, না নিয়ে উপায় নেই। আমি ভাবতে আরম্ভ করেছি, এ ভাবে কতদিন চলবে । ও যা মুজরো করে এনে ছিল, তা ফুরিয়ে এল। কলকাতার খরচ । ওর মনে ভবিষ্যতের ভাবনা নেই, বেশ হাসি গল্প গান নিয়ে স্বর্থেই আছে—কিন্তু আমি দেখছি আমাদের ভবিষ্ণুং অন্ধকার। পান্নার টাকায় সংসার বেশীদিন চলা সম্ভব হবে কি ? আমি সে টাকা বেশীদিন নিতেও পারবো না ? পান্নাকে কথাটা বললাম । ও বুঝতে চায় না। বললে—তাতে কি ? আমার টাকা তোমার নিলে কি হবে ? —মানে নিলে কিছু হবে না। কিন্তু ওতে চলবে না। —কেন চলবে না ? বেশ তো চলচে । —এর নাম চলা ? বলেই সামলে নিলুম। পান্না সরল মেয়ে, তার জীবন-যাত্রার ধারণাও সরল ও সংক্ষিপ্ত ওর মা ছিলে মুজরোওয়ালী, যা রোজগার করেচে তাতেই সেকালে সংসার চলে গিয়েচে বিলাসিভা বাৰুগিরি জানতো না। কোনোরকমে খাওয়া পরা চলে গেলেই খুশী । ওরও জীবন-যাত্রার প্রণালী সম্বন্ধে যে সহজ ধারণা আছে, আমি তার অপমান করতে চাইনি। বললাম—ধরে তুমি যদি দু'দিন বসে থাকে, আসরের বায়ন না পাও? —সে তুমি ভেবে না। 행 —আমাকে বুঝিয়ে বলে কিসে চলবে ? খাবো কি দু'জনে ? পান্না হি হি করে হেসে ওঠে। ঘাড় দুলিয়ে বলে—খেতে পেলেই ত তোমার হোল ? - আমি চুপ করে রইলাম। ও সংসারের কোনও খবরই রাখে না। কি কথা বলবো এ সম্বন্ধে ওকে ? - ও বললে—তুমি কি ভাবচো শুনি ? —ভাবচি আমাকেও টাকা রোজগার করতে হবে। —বেশ, পার তো করে। আমি কি বারণ করেছি ? —তুমি জান আমি ডাক্তার। আমাকে কোথাও বলে ডাক্তারখানা খুলতে হবে, তবে রোজগার হবে ।