পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দম্পতি 3\se দেখিয়ে আনি । গদাধর বিশেষ শৌধীন-প্রকৃতির লোক নহেন। এতদিন কলিকাতায় আসিয়াছেন বটে, কিন্তু এখনও এক দিনের জন্ত কোনো আমোদ-প্রমোদের দিকে যান নাই—নিজের আড়তে কাজকৰ্ম্ম লইয়াই ব্যস্ত থাকেন। নিৰ্ম্মলের পীড়াপীড়িতে সেদিন সন্ধ্যাবেলাটা বায়োস্কোপ দেখিতে গলেন । ‘প্রতিদান’ বলিয়া একটা বাংলা ছবি•••গদাধরের মন্দ লাগিল না। অনেকদিন তিনি থিয়েটার বা বায়োস্কোপ দেখেন নাই, বাংলা ছবি এমন চমৎকার হইয়া উঠিয়াছে, তাহার সন্ধানই তিনি রাখেন না। বায়োস্কোপ হইতে বাহির হইয়া নিৰ্ম্মল বলিল—চা খাবে ? —ত মন্দ হয় না । —চলে, কাছেই আমার এক বন্ধুর বাড়ী, তোমায় আলাপ করিয়ে দিই। মিনিট-পাঁচেক-রাস্তা-দূরে একটা গলির মোড়ে বেশ বড় একখানা বাড়ীর সামনে গিয়া নিৰ্ম্মল বলিল—দাড়াও, আমি আসচি । কিছুক্ষণ পরে একটি স্বপুরুষ যুবকের সঙ্গে নিৰ্ম্মল ফিরিয়া আসিল । হাসিয়া বলিল—এই যে, আলাপ করিয়ে দিই, এরই নাম গদাধর বস্থ, বাড়ী— গদাধর অবাক হইয়া চাহিয়া বলিলেন—আরে শচীন ষে! তুমি এখানে ? —এসো ভাই, এসো। নিৰ্ম্মল আমাকে বললে, ‘কে এসেচে স্তাখো! তুমি ষে দয়া ক'রে এসেচো--"আমি ভাবলুম না-জানি কে ? তা তুমি ! সত্যি ? —এটা কাদের বাড়ী ? —আরে, এসোই না ! অনেকদিন দেখাশুনা নেই—সব কথা শুনি । - সম্পর্কে শচীন তাহার জ্যাঠতুতো ভাই,—অর্থাৎ বড়-তরফের সত্যনারায়ণ বস্থর বড় ছেলে—আর বারে ‘কুঙ্কম-বাম্নীর দ’র ভাগবাটোয়ারার সময় ইহারই উদেশে শ্লেষ করিয়া কথা বলিয়াছিলেন গদাধর। শচীন বকিয়া গিয়াছে, এ-কথা গ্রামের সকলেই জানিত—তবে গদাধর শুনিয়াছিলেন, আজ-কাল সে ভালো হইয়াছে—কলিকাতায় থাকিয়া কি চাকুরি করে | * গদাধর বলিলেন–নির্ণলের সঙ্গে তোমার দেখাশুনো হয় নাকি ? শচীন হাসিয়া বলিল-কেন হবে না ? তুমি তো আর দেশের লোকের খোজ নাও না । শুমলুম, বাড়ী করেচ কলকাতায়--- —হ্যাঃ, সে আবার বাড়ী ! কোনো রকমে ওই মাথা গোজবার জায়গা--- —বৌদিদিকে এনেচে নাকি ? —অনেকদিন । * —আমাদের তো আর যেতে বললে না একদিন । সন্ধানই কি রাখো ! —আমি কি ক’রে সন্ধান রাখি, বলে ? নিৰ্ম্মল নিয়ে এলে তাই তোমাকে চক্ষে দেখলুম এই এতকাল পরে। তুমি তো গ্রামছাড়া আজ তিন বছরের ওপর।