পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७१● বিভূতি-রচনাবলী অনঙ্গ বলিল-আজ কি শোবে, না, খাতাপত্র নিয়ে বসে থাকবে ? রাত কটা, খেয়াল আছে ? গদাধর হঠাৎ অনঙ্গর দিকে পূর্ণ-দৃষ্টিতে চাহিলেন। অনঙ্গও মেয়েমানুষ—দেখিতেও মনা নয়—কিন্তু কি ঠকাই ঠকিয়াছেন এতদিন ! সত্যিকার মেয়ে বলিতে যা বোঝায়, তা তিনি এতদিন দেখেন নাই। আজই অন্যত্র তাহা দেখিয়া আসিলেন এইমাত্র। वजिद्वजन-७झे शॉट्टे । —আজ তো খেলেও না কিছু ! শরীর ভালো আছে তো ? অনঙ্গ প্রকষ্ঠ নয়। গলার স্বর আরও মোলায়েম হইলেও ক্ষতি ছিল না । মেয়েদের কণ্ঠস্বর মিষ্টি হইলেই ভালো মানায়—কিন্তু সব জিনিসের মধ্যেই আসল আছে, আবার মেকি আছে | মশারি গুজিতে গুজিতে অনঙ্গ বলিল—আজ কোথাও গিয়েছিলে নাকি ? রাত ক’রে ফিরলে যে ! —হঁ্যা, ওই বায়োস্কোপ দেখে এলুম কিনা ! অনঙ্গ অভিমানের স্বরে বলিল—তা যাবে বৈকি। আমায় নিয়ে গেলে না তো ! কি দেখলে ? —একটা বাংলা ছবি•••য়স আর একদিন দেখো । . অনঙ্গ আবদারের স্বরে বলিল—কি ছবি, বলে না ? বলে না গো গল্পটা ! সেই পুরানো অনঙ্গ বহুদিনের স্বপরিচিত সেই আবদারের সুর। কতবার কত গল্প এই স্ত্রীর সঙ্গে--রাত একটা-দুইটা পৰ্য্যস্ত জাগিয়া থাকা গল্প করিতে করিতে ! কিন্তু গদাধর বিস্ময়ের সহিত লক্ষ্য করিলেন, আজ অনঙ্গর সঙ্গে গল্পগুজব করিবার উৎসাহ যেন তিনি নিজের মধ্যে খুঁজিয়া পাইতেছেন না ! খাতাপত্র মুড়িয়া ঈষৎ নীরস-কণ্ঠে গদাধর বলিলেন—কি এমন গল্প ! বাজে ! —হোক বাজে,-—কি দেখলে•••বলো না লক্ষ্মীটি । ” —বড় খাটুনি গিয়েচে আজ, কথা বলতে পারচি নে । অনঙ্গ ঠোঁট ফুলাইয়া বলিল—ত পারবে কেন ? খাতাপত্র ঘাটবার সময় খাটুনি হয় না।--সঙ্গীটি, বলে না, কি দেখলে ? —কাল সকালে শুনলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে বাবে না! সত্যি, বড় ঘুম পাচ্ছে। অমঙ্গ রাগ করিল বটে, সঙ্গে-সঙ্গে বিস্থিতও হইল। স্বামীর এমন ব্যবহার যে ঠিক নূতন, তাহা নহে। ঝগড়াও কতবার হইয়া গিয়াছে দু-জনের মধ্যে—কিন্তু লে ঝগড়ার মধ্যে সত্যিকার ঔদাসীন্য বা তিক্ততা ছিল না। আজ গদাধর ঝগড়ার কথা কিছু বলিতেছেন ন— খুব সাধারণ কথাই। অথচ তার নারীচিত্ত যেন বুঝিল, ওই সামান্ত সাধারণ অতি-তুচ্ছ । প্রত্যাখানের পিছনে অনেকখানি ঔদাসীন্য এবং তিক্ততা বিদ্যমান।