জ্যোতিরিঙ্গণ , ২৭১
ঠাকুরদা আবার গল্প বলতে শুরু করলেন। বাঘের গল্প জমাতে পারলেন না, কেবল ভুলে যান, আবার গোড়া থেকে শুরু করেন। উলটে-পালটা করে ফেলেন, কখন বলেন শিকারীর নাম উজিরালি বিশ্বেস, কখনও বলেন তার নাম আজিমুদ্ধি বিশ্বেল ।
এমন সময় মা ভাত নিয়ে এলেন ।
আমরা বললাম—ঠাকুরদাদা, ভাত এনেছে মা ।
—ও, এস বোমা। কি রাধলে ?
—মাছের ঝোল আর চচ্চড়ি ।
—হরিশ আসে নি বৌমা ?
--न; ।
—এখনও এল না ? রাত তো অনেক হয়েছে—
—রাত বেশি হয় নি। আপনি খেতে বন্ধন, আমি দুধ আনি ।
—হরিশ এলে বলে আমার সঙ্গে যেন দেখা করে।
মা চলে গেলেন। ঠাকুরদাদার সামনে দাড়ালে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলতে হবে । ঠাকুরদাদা খাওয়া শেষ করে কিন্তু অন্য দিনের মত শুতে গেলেন না, ঠায় অনেক রাত পৰ্য্যস্ত রোয়াকে বসে রইলেন, আর কেবল মাঝে মাঝে যার-তার পায়ের শব্দ শুনে বাবার নাম ধরে
ডাকতে শুরু করলেন ।
অনেক রাত্রে মা বললেন—বাব, আপনি এবার শুয়ে পড়ুন। ফুচুকে পাঠিয়ে দিই, আপনাকে শুইয়ে আস্বক।
—হরিশ এসেছে ?
-न] ।
—কেন এল না এখনও ?
—আপনার কিছু মনে থাকে না । তিনি গোয়াড়ি গিয়েছেন মনে নেই ? বুধবারে আসবেন আপনাকে বলে গেলেন যে A শুয়ে পড়ুন।
ঠাকুরদাদা বলে কি ভাবলেন। কঙ্গর উত্তর দিলেন না । হয়তো মনে পড়ল বাবার গোয়াড়ি যাওয়ার কথা। ফুচু গিয়ে তাকে শুইয়ে দিয়ে এল। অনেক রাতে শুনলাম, ঠাকুরদাদার ঘর থেকে কান্নার শব্দ আসছে। মা শুনে বললেন—দেখে আয় কি হল ।
গিয়ে দেখি ঠাকুরদাদা বিছানার ওপর উঠে বলে কোণের দিকে হাত বাড়িয়ে লাঠি হাতড়াচ্ছেন। তিনি নাকি এখুনি বাবার সন্ধানে বেরুবেন । বাবা কেন আসেন নি এখনও। তিনি মোটেই ঘুতে পারেন নি নাকি। আমরা জানি, এ কথা ঠিক নয়। ঠাকুরদাদা বসে বসে ঢুলে পড়েন, তিনি না ঘুমিয়ে আছেন এত রাত পৰ্য্যন্ত ! ইস্! তা আর জানি নে !
ঠাকুরদাদাকে বোঝাবার অনেক চেষ্টা করলাম। অবশেষে মা গিয়ে কড়া স্বরে বললেন— আচ্ছ, বাবা, আপনার কাওখানা কি শুনি ? ওরা ছেলেমানুষ, ওদের ঘুমুতে দেবেন না একটু ? এক শ বা আপনাকে বলা হচ্ছে তিনি গোস্বাড়ি গিয়েছেন, বুধবারে আসবেন, আপনি কিছুতেই
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৯১
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
