$bre বিভূতি-রচনাবলী
ডাল ধুতে নেমেছেন। জেলির মা হেসে বললেন—ও জেলে-বোঁ, জেলি কাল রাত্তিরে বাড়ী
এসেছে—
—ওমা, কি হবে । তাই নাকি ?
অমনি সে এটো বাসন ফেলে ছুটে আসবে।
--কই, কোথায় গেল আমার সোনা, আমার মানিক, আমার বাছা— 魯
জেলিকে সে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিল। যখন জেলি বাড়ী আসবে, তখন সে কি স্বকৃত্রিম মাতৃস্নেহের পরিচয় ওর চোখমুখে ! জেলির জন্যে বড় কই মাছ জোগাড় করে নিয়ে আসবে, নিজের ঘরের গাইয়ের দুধ ঘটি মেপে দিয়ে যাবে, সরু চি ড়ে কুটে সঙ্গে বেঁধে দেবে জেলির চাকুরিস্থানে চলে যাওয়ার দিন ।
কত দিন এই মাতৃস্নেহের লীলা দেখে এসেছি।
সেই জেলেবোঁ আজ এখানে !
কত দূরে যশোর জেলার এক অজ পাড়াগ থেকে। জীবনে কখনও যে রাণাঘাটও যায় নি, সে আজ এসেছে খড়গপুর, সাত সমূদ্র তের নদী পার হয়ে, বাশবাগানের তলায় ওদের জেলেপাড়ার সেই খড়ের ঘরখানা ছেড়ে ছেলের বাসায় !
জেলেবোঁ আমায় দেখে এগিয়ে এসে বললে—দাদাঠাকুর আমাদের কতদূরে এসে নেকচার বলছে ! আমায় কানাই বললে—দাদাঠাকুরের নেকচার হবে আজ সভায় । আমি বলি, আমায় নিয়ে চল, কতকাল দেখি নি তাকে । কি মুন্দর লেকচার বললেন আপনি ।
বলে সে আমার পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলে । বয়সে সে আমার চেয়ে বড়, আমার দিদির সমান। কিন্তু আমি ব্রাহ্মণ, জেলেবেী আরও বড় হলেও সে এমনিভাবেই আমায় প্রণাম করত । গ্রামের নিয়ম |
বললাম—ভাল আছ কানাইয়ের মা ?
—আপনাদের আশীৰ্ব্বাদে আছি একরকম। বৌদিদি কই ? ছেলেমেয়ের সব ভাল ?
—একরকম ভাল আছে । আজকাল সবাই কলকাতারু।
—দেশে যান নি ? y
—মধ্যে গিয়েছিলাম একবার। মাস দুই আগে । ]
ও অমনি আকুল ও পিপাসিত স্বরে বললে—বলুন গায়ে কে কেমন আছে ? ইতিমধ্যে সভার উদ্যোক্তাগণ আমাকে তাগিদ দিতে লাগলেন—তাহলে কাইগুলি আস্বন, আবার আমাদের নববর্ষের ডিনার পার্টির আয়োজন রয়েছে মি: বাস্থর ওখানে—
আমার কিন্তু যাবার ইচ্ছে নেই সত্যি একটুও । এদের টান আমার হাজার ডিনার পার্টির চেয়েও বেশি। সমস্ত খড়গপুর শহরের হাজার স্বশিক্ষিত, স্বমাজ্জিত, স্বভদ্র লোকের মধ্যে এই গ্রাম, অশিক্ষিতা জেলেবোঁকে আমার অনেক বেশি আপনার জন বলে মনে হল সেই মূহূর্তে।
জেলে-বোঁ বললে—ত হবে না, সে কি দাদাঠাকুর ? মোদের বাসায় যেতি হবে না বুঝি, না এমনি ছাড়ব ? পায়ের ধুলো দেবেন না বুঝি বাসায় ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩০০
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
