পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিঙ্গণ ২৮e এর পরে মিঃ বাস্থর ডিনার পার্টিতে খুব জাকজমকের ভোজ ও আদর-আপ্যায়নের ব্যাপার । চপ, কাটলেট, পায়েস, ক্ষীর, আম, সদেশের ছড়াছড়ি । সত্যি চমৎকার খাওয়া । অফিসারদের অঞ্চলের বড় বাংলো। টেনিসের সবুজ লন। ভারবিনা ও জিনিয়ার সারি। অ্যারিস্টলোকিয়া লতার ঝুমকো ফুল গেটে দুলছে। মিঃ বাক্ষর মেয়ে কল্যাণী, নীলিমা এসরাজ বাজিয়ে আমাদের শোনালে, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলে, ছোট মেয়ে রেণু একটা ইংরেজী কবিতা আবৃত্তি করলে ! তার পর দুই বোনে মিলে রামধুন গাইলে অতি সুন্দর । দুই বোনই শান্তিনিকেতনে থেকে পড়াশোনা করে । দেখতেও সুন্দরী । খেতে বসে কতবার মনে হল কানাইয়ের মার বাসার সেই সস্তা টাইমপিস ঘড়িটাতে কটা বাজল দেখে আসি । বন্দী অনেকদিন পরে দেশে ফিরেছি মাত্র দিন পাচ-ছয়ের জন্যে । বাড়ীতে চাবি দেওয়া আছে আজ বছর খানেক। স্ত্রীপুত্র ঘাটশিলার বাড়ীতে গিয়েছে অনেকদিন। বর্ষাকালে আর নিয়ে আসিব না । বাজারে একটি লাইব্রেরী করেছে ছেলেরা । বিকেলে সেখানে তারা আমায় নিয়ে গেল । সেখানে বসে ওদের সঙ্গে গল্প করছি, এমন সময় বাইরে থেকে কে বললে, আপনাকে একজন ভদ্রলোক ডাকছেন। বাইরে এসে দেখি একটি যুবক বেঞ্চির উপর বসে আছে, আমায় দেখে জোড়হাত করে দাড়িয়ে উঠল। বললাম, বক্ষন বস্কন, নমস্কার । কোথা থেকে আসছেন ? যুবকের বেশের দিকে চেয়ে আমার একটু অদ্ভুত লাগল। লম্বা প্যান্ট ও হাফ-শার্ট পরা, গলায় দুটো টাই একসঙ্গে বাধা N পায়ে দামী চামড়ার জুতে, তবে বর্ষার জলে-কাদায় বিবর্ণ। চোখে চশমা, কঞ্জিতে হাণ্ড-ঘড়ি । আমায় যুক্ত করে নমস্কার করে বললে, চিনতে পারছেন না ? \ –Gli | —কেন, সেই বাগেরহাটে ? বাগেরহাটে দু বছর আগে একটা সভায় গিয়েছিলাম বটে, কত লোকের সঙ্গেই সেখানে আলাপ হয়েছিল, তার মধ্যে কোন একজনকে মনে করে রাখার মত আশ্চৰ্য্য স্মৃতিশক্তি আমার নেই। তবুও মিথ্যে কথা বলতে হল বাধ্য হয়ে । এত আশার দৃষ্টি যুবকের চোখে, কেমন মায়া হল । বললাম, ও ! এবার মনে পড়েছে বটে। না চিনতে পারার একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে গিয়ে বললাম,—আপনার চেহারা একটু খারাপ হয়ে গিয়েছে। এখন কেউ নেই ষে ভাবে না তার স্বাস্থ্য বর্তমানে ভাল যাচ্ছে না। যুবকটি তখনই বললে,