পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিঙ্গণ Վա Ֆ অনেকটা গিয়ে গ্রামের প্রান্তসীমায় ফকা মাঠ ও বনের সামনে খড়ের স্কুলঘর। সে এমন একটি স্বপ্নময় সুন্দর জায়গা যে মনে হল এখানে মাস্টারি করা একটা সৌভাগ্য। স্কুলের মাঠের অল্পদুরেই নিবিড় অরণ্য-ভূমি শুরু । রাত্রে নাকি স্কুলের রোয়াকে ভালুক এসে বেড়ায়। জারুল ফুল ফুটে আছে অদূরবত্তী বনশীর্ষে, যে জারুল গাছ কত যত্ব করে কলকাতার রাস্তার ধারে মানুষ করা হচ্ছে । আমি স্কুলের মধ্যে ঢুকতেই ছাত্রছাত্রীর উঠে দাঁড়াল একসঙ্গে । নারীন হাসদার মেয়ে নার্সদের মত কাপড় পরে নীচু টুলে বসে ছাত্র পড়াচ্ছিল । বাইশ তেইশ বছর বয়স হবে , কালে বটে, তবে কুচকুচে কালো নয়, চোখ দুটিতে সরলতা ও ঔৎস্থক্যের দৃষ্টি । হাতজোড় করে নমস্কার করলে, আমিও নমস্কার করলাম। বেশ লাগল মেয়েটিকে । স্কুলের দেওয়ালে একখানা ব্ল্যাকবোর্ড টাঙানো, তার একপাশে মহাত্মা গান্ধীর ছবি একখানা। একখানা বাংলা ক্যালেণ্ডার ঝুলছে তার পাশে । মেজেতে মাছর পাত, তাতে ছাত্রছাত্রীরা বসে ; সামনে একটা করে নীচু টুল, তাতে বইপত্তর রাখে। নারান ইসিদা বললে—এই আমার মেয়ে, এর নাম স্বশীল । আমি বললাম-—বেশ । আপনি বমুন । আপনার ছাত্রছাত্রীরা কি পড়ে ? মেয়েটি বিনীতভাবে বললে—লোয়ার প্রাইমারি পাঠশালা এটা । একটি ওরই মধ্যে বড় ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম—কি পড় ? —সরল সাহিত্যপাঠ । —পড় তো একটু -- আচ্ছ, বেশ হয়েছে । বস ৷ ভাল পড়েছ । মেয়েটি বললে--একটা কবিতা শুনবেন ? —নিশ্চয়ই | আমাকে অত্যন্ত অবাক করে দিয়ে একটি ছোট ছেলে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করলে— ঐ দেখ মা, আকাশ ছেয়ে মিলিয়ে এলো আলো, অাজকে আমীর-ছুটোছুটি • লাগলো না আর ভালো । ঘণ্টা বেজে গেল কখন, অনেক হলো বেলা, তোমায় মনে পড়ে গেল, ফেলে এলেম খেলা ৷ যে দেশের ঘন বনানী ও পাহাড় অঞ্চলের ক্ষুদ্র সাওতাল গ্রামের ছোট ছেলে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করে, সে দেশ বাংলা-ভাষী নয় এ অদ্ভুত মন্তব্য কাদের ? তারা এসে যেন দেখে যায় ।