পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eఆ বিভূতি-রচনাবলী পাড়ার ছেলেদের জিগ্যেস করে—হঁ্যারে, আজ হাটে পটল কত করে সের ? —ও নিতাই, আজ হাটে মাছ কত করে সের ? তবুও কেশব গাঙ্গুলীকে সামলানো অত সহজ নয়। চল্লিশ বছর তিনি রেলে কাজ করে এসেছেন। মুক্তকেশী যতই কৌশল করুক, যতই সতর্ক হোক, কেশব গাঙ্গুলীর ফাক ধরতে পারা অত সহজ কাজ বুঝি ? 顧 পটোলের মধ্যে বাসি তাজা নেই ? দেখলে হয়তো ঠিক ধরা যায় না, কিন্তু দর বিভিন্ন। মাছের মধ্যেও দূরের তারতম্য নেই ? কত ধরবে মুক্তকেশী ? না করলেই বা কেশব গাঙ্গুলীর বাজে খরচ চলে কোথা থেকে ? চাইলে স্ত্রীর হাত থেকে পয়সা বার করা শক্ত। ঐ নিয়েই তো যত ঝগড়া । কেশব গাঙ্গুলী বাড়ী থেকে বেরিয়ে স্টেশনে এসে পোঁছলেন বেলা তিনটের সময়। কাল হাট থেকে ফিরবার সময় ছ’ আনা পয়সার হেরফের করেছিলেন, সেই পয়সা পকেটে খুচরো আছে—আর আছে গুপ্তস্থান থেকে সন্তর্পণে বার করা তিন টাকা সাত আনা । এই তিন টাকা তের আন ছাড়া জগতে র্তার বলতে আর কোথাও কিছু নেই। হ্যা, অবিস্থিা পকেট ঘড়িটা আছে। সেটাও রেলের জামার বুক পকেটে এনেছেন। বিক্রী করলে কোন না ত্রিশ-চল্লিশ টাকা হবে ? সেকালের কুরুভাইজার ফ্রেরিসের ঘড়ি। এখনকার মত ফঙ্গবেনে জিনিস নয় । স্টেশনের কাছে একটা জমি গাছের তলায় পাকিস্থানের উদ্বাস্তুদের পানবিড়ির দোকান। পান কিনলেন দু’পয়সার । বিড়িও দু’পয়সার । দেশলাই একটা কত ? চার পয়সা ? দাও একটা । পান খেয়ে বিড়ির ধোয়া টেনে কেশব গাঙ্গুলীর শরীরের কষ্ট খানিকটা দূর হল। এতক্ষণ চিন্তা করবার মত অবস্থা তার ছিল না । তিনি আপাতত যাবেন কোথায় ? সেটা কিছু ঠিক করেন নি, না করেই বাড়ী থেকে বেরিয়েছেন অবিপ্তি। এখনো ট্রেণের ঘণ্ট-খানেক বিলম্ব আছে। যাবেন কোথায় ? যেখানে যান, যেতে তো হবে ? তিন টাকা তেরো আনায় স্বাধীনভাবে খাওয়া কতদিন চলবে? ' . মেয়ের বাড়ী যাবেন ? জামাই কাজ করে টিটাগড়ের কাগজের কলে । টিটাগড়েই বাসা । সেখানে যেতে লজ্জা করে। এই গত জ্যৈষ্ঠ মাসে সেখানে গিয়ে দুদিন ছিলেন। অবিপ্তি জামাইযষ্ঠর তত্ত্বস্বরূপ নিয়ে গিয়েছিলেন কিছু আম ও দুটো কাঠাল। বার বার জামাইবাড়ী যেতে আছে ? বিশেষ করে আজকাল রেশনের চালের দিনে কারো বাড়ীতেই একবেলার বেশি দুবেলা থাকতে নেই। কি মনে করবে। যে কাল পড়েছে। ট্রেণ এসে পড়লো ৷ উঠে বসলেন এক কোণে । রেলের জামা আছে, টিকিট লাগবে না। হু হু করে ট্ৰেণ চললো। কাশফুলের ক্ষেতে কাশফুল ফুটতে শুরু করেছে। খুব বৃষ্টি