পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

DS e বিভূতি-রচনাবলী থাকেন, গঙ্গাস্নানটা করলে ভাল হত ! দুজনে গঙ্গাস্নান করে এলেন । তারপর রমাপতির ছোট নাতনী তাদের দুজনের জন্তে শ্বেতপাথরের রেকাবিতে কাটা পেঁপে, কলা, নাশপাতির টুকরো আর সন্দেশ, রসগোল্লা ও চমচম নিয়ে এল। কেশব গাঙ্গুলীকে বললে—দাদু, আপনার রান্নার যোগাড় কি এক্ষুনি করে দেবো ! নমঃ একটু দেরি হবে ? অর্থাৎ এরা গন্ধবণিক । ভাত রোধে দেবে না ব্রাহ্মণের পাতে । রাত্রে লুচি খোওরাতে পারে, কিন্তু দিনে ভাত রোধে খেতে হবে । কেশব বললেন—আমি চলে যাবে আজ দিদি– রমাপতি কুণ্ডু বললে—সে কি কথা গাঙ্গুলীমশায় ? আজ ওবেলা আপনাকে নিয়ে হরিসভায় ভাগবতপাঠ শুনতে যাবো ঠিক করে রেখেছি— রমাপতির নাতনী টুনিও বললে—আজ যাবেন কি দাদু ? আজ আমরা ওবেলা তালের ফুলুরি, তালের ক্ষীর করবে, আপনি আজ চলে যাবেন, যেতে তো দিলাম ? কেমন মুখের সংসার ! কেমন মিষ্টি কথাবার্তা, মিষ্টি ব্যবহার। লক্ষ্মী যেখানে বিরাজ করেন, সেখানে কি কোনো জিনিসের ক্রটি থাকে ? সারাদিন বড় আনন্দে কাটলো। খাওয়া-দাওয়ার প্রচুর ব্যবস্থা । ‘সন্ধ্যার দিকে গঙ্গার ধারের হরিসভায় ‘অজামিলের উপাখ্যান’ শুনতে গেলেন দুজনে। ব্যাখ্যাকারী নবদ্বীপের গোস্বামী-বংশের লোক, বড় স্বন্দর বোঝাবার ও বর্ণনা করবার ক্ষমতা । ভগবান অমন মহাপাপী অজামিলকে রুপ করেছিলেন, শুধু বিপন্ন হয়ে সে কাতরে তাকে মৃত্যুকালে ডেকেছিল বলে । তিনি কি এতই পাপ করেছেন ? ভগবান নিশ্চয় তাকে ঠেলে ফেলে দেবেন না দূরে। কিন্তু কোথায় কিভাবে স্থান দেবেন ভেবে পাওয়া যাচ্ছে না । আহা । জগতে এত সুখ এত আনন্দ চারিদিকে, অথচ তারই ভাগ্যে সব এমন হল কেন ? আসবার সময় রমাপতি কুণ্ডুকে বললেন—বেশ আছেন কুণ্ডুমশাই, না ? —আপনার আশীৰ্ব্বাদে— o —আমায় একটা চাকরি করে দিন না ? —কি রকম চাকরি ? —এই ধরুন, কারো বাড়ীতে থেকে ছেলে পড়ানো, কি হাট-বাজার করা । —পাগল ! আমাদের এই বয়সে কি পরের চাকরি করা চলে দাদা ? কেন, চিরকাল চাকরি করে এসে বুঝি বাড়ী থাকতে ভালো লাগছে না ? তা হোক। বাড়ী বসে ভগবানের নাম করুন গে । না । বোঝাতে পারলেন না । সব কথা বলা যায় না । কাল এখান থেকে চলে যেতে হবেই। عية