ее? বিভূতি-রচনাবলী
মত শক্তি নেই তার ।
সত্যি । বড় খিদে পেয়েছে। কি করবেন এখন ? ঘড়িটা বেচবেন ?
মনে পড়ে, তার প্রথম যৌবনে তিনি ব্যাণ্ডেল স্টেশনের সিগন্যাল ক্লার্ক ছিলেন। ওই তো র্তার সেই ঘর ; সেই টেবিল—সব সেই রকমই আছে । তার কোয়ার্টার্স এখানে ছিল না, গঙ্গার ধারে একটা ছোট বাড়ী ভাড়া করে পিসীমাকে নিয়ে থাকতেন। বাসার কাছে একটা ঘোড়ানিম গাছ ছিল। পঞ্চাশ বছর আগেকার কথা, অৰ্দ্ধ শতাব্দী আশ্চৰ্য্য, সেই টেলিগ্রাফের টেবিলট
আজও আছে !
মুক্তকেশীর সঙ্গে তখন সবে বিয়ে হয়েছে । ঘোড়ানিম গাছের তলাকার সেই বাসায় মুক্তকেশী ঠিক সন্ধা সাতটার সময় জানলার কাছে এসে দাড়িয়ে থাকতো। তিনি ফিরবেন, তাকে দেখবে বলে ।
ষোড়শী বালিকা মুক্তকেশী । কি হাসি ছিল মুখের । চোখ হাসতো তাকে দূরে পথের উপর
দেখতে পেয়ে ।
আছে সেই বাড়ীটা আজও ? তাদের দুজনের অতীত যৌবনের সুখের প্রহরগুলির সাক্ষী সেই বাড়ীটা ?
একদিন বললেন—আচ্ছা মুক্ত, তুমি দাড়িয়ে থাকো কেন জানলায় ?
মুক্ত বলেছিল—তুমি আস, তাই।
—কেন ?
—পথের ওপর দেখতে পেয়ে খুশী লাগে । কতক্ষণ দেখিনে ।
—মন কেমন করে ?
—ত করে না ?
একদিন মনে আছে, তাকে জানলা থেকে বললে—আজি কি করেছি বলে তো তোমার
জন্যে ?
—কি গো ?
—ডাল- |
—সত্যি ?
—হ্যাঁ, এসে দ্যাখে ।
তারপর তিনি বাড়ীতে ঢুকলে তাকে পাখার বাতাস দিয়ে স্বস্থ করে মুক্ত পিড়ি পেতে বসিয়ে ১৬১৭ খানা গরম ডালপুরি খাইয়েছিল কত যত্ন করে।
আর সেই মুক্তকেশী আজ পঞ্চাশ বছর পরে তাকে দূর, দূর করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিল । আজ যখন মুক্তকেশীর সেবা সবচেয়ে তার দরকার হয়েছে, তখন !
চোখ দিয়ে জল বেয়ে পড়লো হু হু করে কেশব গাঙ্গুলীর। কেমন যেন মনে হল সব শূন্ত। ওই আকাশের নিরালা মেঘগুলির মতই তার মন শূন্ত, জীবন শূন্ত, নিরাল, নিরবলম্বন। পৃথিবীতে কেউ তার কোথাও নেই-পঞ্চাশ বছর আগের সেই ষোড়শী রূপসী মুক্তকেনীকে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
